উদারনীতিবাদ কি ? উদারনীতি বাদের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো। উদারনীতিবাদ - Political Science Notes Online

উদারনীতিবাদ বলতে কি বোঝো ? উদারনীতি বাদের বৈশিষ্ট্য 

  উদারনীতিবাদ বলতে সেই মতবাদকে বোঝায় , যা ব্যক্তির স্বাধীন চিন্তার ও মত প্রকাশের অধিকারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে , ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকারকে অপরিহার্য মনে করে ও রাষ্ট্রের কার্যাবলিকে সীমিত করতে চায় । অর্থাৎ ব্যক্তিস্বাধীনতার অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য যে চিন্তাধারার উদ্ভব ও বিকাশ হয় , তাই হল উদারনীতিবাদ । উদারনীতিবাদ ব্যক্তিস্বাধীনতার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করে বলে অনেকে এই মতবাদকে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ বলে অভিহিত করেন । 


 উদারনীতিবাদের বৈশিষ্ট্য : উদারনীতিবাদের কতকগুলি বৈশিষ্ট্য ও মৌলিক নীতি পরিলক্ষিত হয় । এগুলি হল—

 ( 1 ) অবাধ বাণিজ্যনীতি : উদারনীতিবাদ অবাধ বাণিজ্যনীতিকে গুরুত্ব দেয় । উদারনীতিবাদের প্রবক্তাগণ মনে করেন , রাষ্ট্রের কাজ হল বিদেশি শক্তির হাত থেকে ব্যক্তি তথা রাষ্ট্রকে রক্ষা করা এবং রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে জনগণের সুযোগসুবিধাকে সংরক্ষণ করা । 


 ( 2 ) জনসম্মতি : রাষ্ট্রের সমস্ত ক্ষমতার উৎস হল জনসম্মতি । উদারনীতিবাদ মনে করে ব্যক্তির শক্তিকে উপেক্ষা করে রাষ্ট্রশক্তি স্বীকৃতি লাভ করতে পারে না । এ প্রসঙ্গে T. H. গ্রিন - কে উদ্ধৃত করে বলা যায় — "পাশবিক বলে নয় , সম্মতিই হল রাষ্ট্রের ভিত্তি " ।


 ( 3 ) অধিকার সংরক্ষণ:  উদারনীতিবাদ মনে করে যে , মানুষের কতকগুলি স্বাভাবিক অধিকার আছে । যেমন — জীবনের অধিকার , সম্পত্তির অধিকার প্রভৃতি । ব্যক্তির এই স্বাভাবিক অধিকারগুলি যাতে খর্ব না হয় , সেদিকে রাষ্ট্র লক্ষ রাখে এবং এইসব অধিকারগুলি সংরক্ষণ করে ।


 ( 4 ) স্বাধীনতা : উদারনীতিবাদে স্বাধীন চিন্তা , স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার মতো ব্যক্তিগত স্বাধীনতাগুলিকে অপরিহার্য বলে মনে করা হয় ।


 ( 5 ) দলব্যবস্থার স্বীকৃতি : উদারনীতিবাদ বহুদলীয় ব্যবস্থায় বিশ্বাসী । কারণ একদিকে রাজনৈতিক দল থাকলে নাগরিকগণ তাদের পছন্দমতো দলকে ভোটদানের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন থাকতে পারে । 


( 6 ) নিরপেক্ষ আদালত : নাগরিকদের ন্যায়বিচার প্রদানের জন্য উদারনীতিবাদে একটি নিরপেক্ষ আদালতের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করা হয় । এরূপ আদালত একদিকে যেমন নাগরিকদের অধিকার রক্ষা করে , অন্যদিকে তেমনই সংবিধানের রক্ষাকর্তা ও ব্যাখ্যাকর্তা হিসেবেও কাজ করে । 


( 7 ) রাজনৈতিক সাম্য : আধুনিক উদারনীতিবাদ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সাম্য প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব দেয় । এজন্য জনগণের শাসন বা গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলে ।


 ( 8 ) সরকারে পরিবর্তন : সাংবিধানিক উপায়ে অর্থাৎ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারের পরিবর্তনের কথা উদারনীতিবাদ বলে ।


                                 সুতরাং , বলা যায় রাষ্ট্রের দায়িত্ব , ব্যক্তির অধিকার , রাষ্ট্রের বিরুদ্ধাচরণের অধিকার প্রভৃতি সম্পর্কে উদারনীতিবাদের আলোচনা তাৎপর্যপূর্ণ । এই মতবাদ রাষ্ট্র ও ব্যক্তির সম্পর্ককে নতুন রূপ দিয়েছে ।

Post a Comment

Previous Post Next Post