ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি দাও। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি - Political Science Notes Online

ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি


ভূমিকা:  সরকার তার কাজকর্ম তিনটি বিভাগ অর্থাৎ আইন বিভাগ , শাসন বিভাগ এবং বিচার বিভাগ - এর মাধ্যমে সম্পন্ন করে । সরকারের এই তিনটি বিভাগ যখন সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ক্ষমতা প্রয়োগ করে , তখন তাকে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বলা হয় । এই নীতির মুখ্য প্রবক্তা হলেন ফরাসি দার্শনিক মস্তেঙ্কু । একই ব্যক্তি সরকারের একাধিক বিভাগের সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত থাকবে না । 


ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পক্ষে যুক্তি : ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পক্ষে কতকগুলি যুক্তির অবতারণা করা যায় , এগুলি হল—

 ( 1 ) ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষিত হয় : ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রযুক্ত হলে সরকারের ক্ষমতা একই শক্তি বা বিভাগের হাতে থাকে না । ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয় না বলে ব্যক্তিস্বাধীনতা সুরক্ষিত হয় ।


 ( 2 ) কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পায়: এই নীতি প্রয়োগের ফলে সরকারের প্রতিটি বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করার ও দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পায় । ফলে প্রতিটি বিভাগের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পায় ।


 ( 3 ) দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধি পায় : সরকারের কাজকর্ম পৃথকভাবে সম্পন্ন করার ফলে প্রতিটি বিভাগের দায়িত্ব নির্দিষ্ট থাকে । কোনো বিভাগ যদি দায়িত্ব পালনে অবহেলা করে , তাহলে জবাবদিহি করতে হয় । কাজেই প্রতিটি বিভাগ তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে সচেষ্ট থাকে এবং ফলস্বরূপ প্রতিটি বিভাগের দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধি পায় ।


 ( 4 ) স্বৈরাচারী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না : এই নীতি প্রযুক্ত হলে সরকারের তিনটি বিভাগকে পৃথক পৃথক দায়িত্ব পালন করতে হয় । তিনটি বিভাগের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ না থাকায় এবং ব্যক্তি একাধিক বিভাগের সঙ্গে যুক্ত না থাকায় সরকারের স্বৈরাচারী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না বললেই চলে । 


ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির বিপক্ষে যুক্তি : ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির কিছু সুবিধা থাকলেও এর কিছু অসুবিধাও বিদ্যমান । এর বিপক্ষের যুক্তিগুলি হল—


 ( 1 ) বিভাজন সম্ভব নয় : মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে যেমন বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব নয় , অনুরূপভাবে সরকারের তিনটি বিভাগকেও পৃথক করা সম্ভব নয় । মানবদেহ থেকে কোনো অঙ্গ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে যেমন দেহ পঙ্গু হয়ে যায় , তেমনই সরকারের তিনটি বিভাগ একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে সরকার পঙ্গু হয়ে যাবে । 


( 2 ) পূর্ণ প্রয়োগ সম্ভব নয় : কোনো রাষ্ট্রেই পূর্ণ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ সম্ভব নয় । কারণ সরকারের তিনটি বিভাগের সমন্বয়ের ফলেই সরকারি কাজকর্ম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত হয় এবং এই তিনটি বিভাগ পৃথক 1 হলে শাসনকার্য পরিচালনায় জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে । কাজেই সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে সমন্বয় একান্ত প্রয়োজন ।


 ( 3 ) ব্যক্তিস্বাধীনতার জন্য আবশ্যিক নয় : নাগরিকদের ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষার জন্য ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি অপরিহার্য নয় । কারণ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি নয় , জনগণের সচেতনতাই হল স্বাধীনতার ভিত্তি ।


 ( 4 ) জনকল্যাণকর রাষ্ট্রের অনুপযোগী : আধুনিক রাষ্ট্র হল জনকল্যাণকর রাষ্ট্র । এই রাষ্ট্রে সরকারের কাজকর্ম ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে । তাই সরকারের এই কাজকর্ম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করার জন্য তিনটি বিভাগের সুষ্ঠু সমন্বয় একান্ত প্রয়োজন , কারণ এর দ্বারাই জনকল্যাণকর -রাষ্ট্রের ধারণাকে বাস্তবায়িত করা সম্ভব হবে ।


 মূল্যায়ন :এ কথা ঠিকই যে , কোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থাতেই পূর্ণক্ষমতা সম্ভব নয় ,তেমনি সুশাসনের স্বার্থে তাও কাম্য নয়। তবে আংশিক ভাবে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ গণতন্ত্রের স্বার্থে একান্ত প্রয়োজনীয়। আংশিক ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ এর অর্থ হল সরকারের বিচার বিভাগকে আইন ও শাসন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ থেকে যথাসম্ভব মুক্ত রাখা।



Post a Comment

Previous Post Next Post