ভারতের লোক আদালতের গঠন, উদ্দেশ্য ও কার্যাবলী আলোচনা করো। উচ্চমাধ্যমিক – Political Science

 ভারতের লোক আদালতের গঠন উদ্দেশ্য ও কার্যাবলী সম্পর্কে আলোচনা করো।

                                                            অথবা

লোক আদালত সম্পর্কে টিকা লেখ ।
 
                                      Or
লোক আদালতের ধারণা ।

ভূমিকা


আদালতের বাইরে মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির অত্যন্ত কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য লোক আদালত গুলিকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। লোক আদালত গঠিত হয়েছে জনচেতনা যুক্ত কিছু মানুষকে নিয়ে । এদের মধ্যে সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি , উকিল,  ছাত্র ও সমাজকর্মীরা থাকেন । বিবদমান  পক্ষসমূহ কে এই আদালতের সামনে আসার জন্য আদালতের সদস্যরা  আবেদন জানান । বিচারপ্রার্থীকে অনেক সময় সুবিচার পাওয়ার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। অনেক সময় দেখা যায় বিচারের রায় বেরোতে দশ থেকে পনেরো  বছর কেটে গেছে। তাই দ্রুত বিচার লাভের উদ্দেশ্যেই লোক আদালতের ভাবনা ।



উদ্দেশ্য

 

গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা। সেজন্য অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মত ভারতে ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ গড়ে তোলা হয়েছে। লোক আদালত গঠনের উদ্দেশ্য হল সহজ উপায়ে দ্রুত বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা । লোক আদালতের বিচার সময় সাপেক্ষ নয়, খরচ খুবই কম হয় । সাধারণত দরিদ্র ব্যক্তিরা এই  আদালতের মাধ্যমে দ্রুত ন্যায়বিচার পেতে পারে । লোক আদালতের মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থার প্রসার ঘটে অন্যান্য আদালতের কার্যভাগ  লাঘব হবে।



ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত


1982 সালের মার্চ মাসে গুজরাটে প্রাথমিকভাবে লোক আদালতের যাত্রা শুরু হলেও "আইনগত পরিষেবা কর্তৃপক্ষ আইন, 1987" কার্যকর হওয়ার ফলে বর্তমানে লোক আদালতগুলি একটি আইনগত ভিত্তি লাভ করেছে । 1985 সালের 6 অক্টোবর দিল্লিতে প্রথম এধরনের লোক আদালতের উদ্ভাবন করা হয় । উদ্ভাবন করেন বিচারপতি পি.এন. ভগবতী । সর্বভারতীয় ইনগত সাহায্য ও পরামর্শ প্রদান বোর্ড এর দিল্লি শাখার উদ্যোগে লোক আদালত গঠিত হয় । প্রথম দিনে পাঁচটি আদালত গঠিত হয় । অবসরপ্রাপ্ত দুইজন বিচারপতিকে নিয়ে প্রত্যেকটি আদালত গঠিত হয় এবং সহজ পদ্ধতিতে বিচারকার্য পরিচালিত হয়। একদিনেই 150 টির মতো মামলার নিষ্পত্তি হয়।


গঠন 


আইনগত পরিষেবা কর্তৃপক্ষ আইন 1994 সালে সংশোধিত হয় । সংশোধনীর 19 (1) নং ধারায় বলা হয় যে , কেন্দ্র,রাজ্য ,জেলা ও তালুকে আইনগত পরিষেবা কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে । এই কর্তৃপক্ষের হাতে লোক আদালত গঠন করার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে । 19 (2) নং ধারা অনুসারে একটি অঞ্চলের লোক আদালত (ক) কর্মরত কিংবা অবসরপ্রাপ্ত বিচারবিভাগীয় অধিকারীদের এবং (খ) অন্য কয়েকজন ব্যক্তিকে নিয়ে গঠিত হবে । অন্য কয়েকজন ব্যক্তির সংখ্যা কত হবে তা লোক আদালত গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের আইনগত পরিষেবা কর্তৃপক্ষ স্থির করে দেয় । সাধারণভাবে একজন খ্যাতনামা আইনজীবী ও একজন সমাজসেবীকে লোক আদালতের অন্যান্য সদস্য হিসেবে নিয়োগ করা হয় ।


কার্যাবলী


 যেসব বিষয় অত্যন্ত জটিল প্রকৃতিসম্পন্ন নয়, সেইসব বিষয় সংক্রান্ত বিরোধের নিষ্পত্তি লোক আদালত করে থাকে । আদালতে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা কিংবা বিচার শুরুর পূর্বাবস্থায় কোনো আদালত বা কর্তৃপক্ষ কিংবা কমিটি সংশ্লিষ্ট বিরোধটিকে লোক  আদালতের কাছে পাঠাতে পারে । তবে কোনো একটি বিরোধ লিপ্ত উভয়পক্ষই যদি লোক আদালতের মাধ্যমে তাদের বিরোধ নিষ্পত্তি করে নিতে সম্মত হয় , তাহলেই কেবল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে এরূপ আদালতের কাছে প্রেরণ করা হয়ে থাকে । সাধারণভাবে ক্ষতিপূরণ , দাবি সংক্রান্ত মামলা , বীমা কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে অর্থ দাবী ও বিবাহ বিচ্ছেদ সংক্রান্ত বিষয়ে নিষ্পত্তি করার লোক আদালত গুলি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। 



লোক আদালতের কার্যপ্রক্রিয়া


লোক আদালতের কাজকর্মের ধারা কতগুলি সদর্থক নিয়ম-নীতি উপর ভিত্তিশীল । এই আদালতের কাজকর্মের সমগ্র প্রক্রিয়াটি পর্যায়ক্রমিকভাবে নিম্নলিখিত ধারায় বিন্যস্ত করা হল –


 প্রথমত , বিবদমান পক্ষ দুটির মধ্যে যেকোনো একটি পক্ষকে সংশ্লিষ্ট বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য লিখিতভাবে লোক আদালতে আবেদন জানাতে হয় । এরূপ আবেদনপত্র পরীক্ষার পর গ্রহণযোগ্য বলে মনে করা মনে করলে সংশ্লিষ্ট বিরোধের নিষ্পত্তির দায়িত্ব এই আদালত গ্রহণ করে। 


দ্বিতীয়ত, বিবাদ-বিসংবাদের  জন্য বিবদমান পক্ষসমূহকে লোকআদালত তার সামনে হাজির হওয়ার জন্য তারিখ, সময় ও স্থান নির্দিষ্ট করে দেয়।


তৃতীয়ত, মীমাংসার অভিমুখে অগ্রসর হওয়ার উদ্দেশ্যে লোক আদালত বিবদমান পক্ষসমূহকে বিবাদের বিষয়সমূহ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে আদালত আহ্বান জানায়।


চতুর্থত , বিবদমান পক্ষসমূহকে বিবাদের বিষয়বস্তু সম্পর্কিত সত্য সম্যকভাবে অবহিত করার জন্য লোক আদালতের বিচারপতি এবং অন্যান্য সদস্যরা সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহ সুষ্ঠুভাবে সম্ভাব্য বাস্তব পদক্ষেপ সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান করেন । সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহ সহমতে  উপনীত হতে সমস্যার সম্মুখীন হলে, বিবাদ-বিসংবাদের অবসানের  উদ্দেশ্যে লোক আদালত সমাধানসূত্র প্রদান করতে পারে। 


পঞ্চমত, লোক আদালতের এই উদ্যোগ আয়োজনের পরিণামে উভয় পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সংবিদা/ সম্মতিপত্র চূড়ান্তভাবে সম্পাদিত হয় । এই সংবিদা পত্রটি উভয় পক্ষের দ্বারা স্বাক্ষরিত হয় । এই সংবিদাপত্রের একটি কপি নিয়মানুগ আদালতের কাছে পাঠিয়ে দিতে হয় । লোক আদালত কোনো ডিক্রি জারি করতে পারে । সংশ্লিষ্ট ডিক্রী ন্যায়-সংহিতা  পদ্ধতি মোতাবেক নিয়মানুগ আদালতকে বলবৎ করতে হয়।


ষষ্ঠত,  মামলার বিষয়বস্তু সম্পর্কিত বিবাদ-বিসংবাদের সংবিদা  সম্পাদিত হওয়ার পর, প্রাসঙ্গিক নিয়মানুসারে আইন-আদালতকে প্রদত্ত কোর্ট ফী   বিবদমান পক্ষ সমূহকে দিতে হয় ।


মূল্যায়ন


 ভারতীয় বিচার ব্যবস্থায় লোক আদালতের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অভিজ্ঞতা আশার আলোর সূচক হিসেবে প্রতিপন্ন হয় । বিশ্বাস করা হয় যে,  সংবিধানের প্রস্তাবনা সংবিধানের রচয়িতা দের অঙ্গীকারের একটি অংশ বাস্তবায়িত হওয়ার সুযোগ সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে । কম খরচে এবং অনতিবিলম্বে ন্যায়বিচার প্রাপ্তির আশা জাগিয়েছে লোক আদালতের ব্যবস্থা। সবদিক থেকেই বিচার বিবেচনা করে বলা যায় যে , লোক আদালত হলো একটি অভিনব বিচারবিভাগীয় উদ্যোগ-আয়োজন।



     https://politicalsciencenotesonline.blogspot.com





[ কোনো কিছু বুঝতে ও নোটস সংক্রান্ত  অসুবিধা হলে আমাদের  সঙ্গে যোগাযোগ করুন ]

 


Post a Comment

Previous Post Next Post