ন্যায় পঞ্চায়েতের গঠন,ক্ষমতা ও কার্যাবলি ।ন্যায় পাঞ্চাতে কি - Political Science Notes Online

 ন্যায় পঞ্চায়েত

১৯৭৩ সালের পঞ্চায়েত আইনে বলা হয় যে , পশ্চিমবঙ্গ সরকার ঘােষণার মাধ্যমে কোনাে গ্রাম পঞ্চায়েতকে ন্যায় পঞ্চায়েত ( Nyaya Panchayat ) স্থাপন করার অনুমতি দিলেই সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েত নিজ এলাকায় ন্যায় পঞ্চায়েত স্থাপনের জন্য প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থাদি গ্রহণ করতে পারে । 


ন্যায় পঞ্চায়েতের গঠন [ Composition ] 

৫ জন সদস্য নিয়ে ন্যায় পঞ্চায়েত গঠিত হতে পারে । ন্যায় পঞ্চায়েতের সদস্যরা বিচারক বলে অভিহিত হন । তাঁরা গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃক নির্বাচিত হন । গ্রাম পঞ্চায়েত , পঞ্চায়েত সমিতি , জেলা পরিষদ অথবা পৌরসভার কোনাে সদস্য ন্যায় পঞ্চায়েতের সদস্য হতে পারেন না । বিচারকরা নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে প্রধান বিচারক হিসেবে নির্বাচন করেন । তিনি ন্যায় পাঞ্চাতের অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন । বিচারকদের সাধারণ কার্যকালের মেয়াদ ৫ বছর । অন্যূন ৩ জন বিচারপতি উপস্থিত না হলে বিচারকার্য চলতে পারে না । গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্মসচিব ন্যায় পায়েতের সচিব হিসেবেও কাজ করেন । তাঁর তত্ত্বাবধানেই ন্যায় পঞ্চায়েতের রায় এবং অন্যান্য প্রয়ােজনীয় কাগজপত্র ও দলিল দস্তাবেজ সংরক্ষিত থাকে ।


ন্যায় পঞ্চায়েতের এক্তিয়ার [Jurisdiction ]

ন্যায় পাঞ্চাতের এক্তিয়ারকে দুভাগে ভাগ করা হয় , যথা —১ ] দেওয়ানি এক্তিয়ার এবং [ ২ ] ফৌজদারি এক্তিয়ার । 


 দেওয়ানি এক্তিয়ার ; ন্যায় পঞ্চায়েত দেওয়ানি মামলার বিচার করতে পারে । ২৫০ টাকা কিংবা তার কম পরিমাণ অর্থ জড়িত আছে এমন সব মামলা ন্যায় পঞ্চায়েতের দেওয়ানি এলাকার অন্তর্ভুক্ত । [ i ] চুক্তি বাবদ পাওয়া অর্থ আদায়ের মামলা [ ii ] অস্থাবর সম্পত্তির অথবা অনুরূপ সম্পত্তির মূল্য ফেরত পাওয়ার মামলা ; [ ii ] অস্থাবর সম্পত্তি অবৈধভাবে গ্রহণ কিংবা তার ক্ষতিপূরণের মামলা এবং [ iv ] গবাদি পশুর অবৈধ প্রবেশের দরুন ক্ষতিপূরণের মামলা ন্যায় পঞ্চায়েতের দেওয়ানি এলাকার অন্তর্ভুক্ত । দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে ন্যায় পাঞ্চাতের রায়ই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয় । অবশ্য সংশ্লিষ্ট ন্যায় পাঞ্চাতের এলাকার মুন্সেফ  যেকোনাে পক্ষের আবেদনক্রমে সেই রায় ন্যায়নীতিবােধের বিরােধী বলে মনে করলে সংশ্লিষ্ট ন্যায় পঞ্চায়েতকে নিজ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার বা অন্য কোনাে ন্যায় পঞ্চায়েতের দ্বারা সেই রায় পুনর্বিবেচিত হওয়ার নির্দেশ দিতে পারেন । 



 ফৌজদারি এক্তিয়ার : ন্যায় পঞ্চায়েত ফৌজদারি মামলারও বিচার করতে পারে । ভারতীয় দণ্ডবিধি - সহ অন্যান্য আইন বা সেগুলির অধীন নিয়মাবলি বা উপবিধি অনুসারে যেসব অপরাধের জন্য সর্বাধিক ৫০ টাকা পর্যন্ত । জরিমানা হতে পারে , সেইসব মামলা ; খেয়াঘাট আইনের ( ১৮৮৫ ) ২৮ ও ৩০ নং ধারা ছাড়া অন্যান্য ধারায় নির্দিষ্ট অপরাধসমূহ - সংক্রান্ত মামলা প্রভৃতিও ন্যায় পঞ্চায়েতের ফৌজদারি এলাকাভুক্ত ক্ষমতার মধ্যে পড়ে । তবে ন্যায় পঞ্চায়েত কোনাে অপরাধের জন্য কোনাে ব্যক্তিকে সশ্রম কিংবা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করতে পারে না । ন্যায় পায়েতের রায়ের বিরুদ্ধে সাধারণভাবে আপিল করা যায় না । তবে জেলা দায়রা জজ বা মহকুমার বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট যদি মনে করেন যে , কোনাে ন্যায় পঞ্চায়েতের রায়ের দ্বারা ন্যায়নীতি লজ্জিত হয়েছে , তাহলে তাদের অধীনস্থ যে - কোনাে আদালতকে মামলাটির পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশ দিতে পারেন । প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে যে , অদ্যাবধি পশ্চিমবঙ্গ সরকার ন্যায় পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠার জন্য কোনাে গ্রাম পঞ্চায়েতকে অনুমতি দেয়নি ।




Post a Comment

Previous Post Next Post