আধুনিক রাষ্ট্রের শাসন বিভাগের কার্যাবলি। শাসন বিভাগের কাজ - Political Science Notes Online

 আধুনিক রাষ্ট্রের শাসন বিভাগের কার্যাবলি আলোচনা করো ।

                         


ভূমিকা : বর্তমানে রাষ্ট্র জনকল্যাণকর রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ায় রাষ্ট্রের কার্যাবলি বিপুল পরিমানে বৃদ্ধি পেয়েছে । ফলে শাসন বিভাগও উত্তরোত্তর অধিক শক্তিশালী হয়ে উঠেছে । সাম্প্রতিককালে মন্ত্রিপরিষদ পরিচালিত শাসনব্যবস্থায় শাসন বিভাগের অপ্রতিহত প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে।

                      

  আধুনিক রাষ্ট্রে শাসন বিভাগ যেসব কার্য সম্পাদন করে , সেগুলির মধ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হলো–


1. নীতি নির্ধারণ করা  : প্রতিটি দেশের শাসন বিভাগের অন্যতম কাজ হল নীতি নির্ধারণ করা । সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ক্যাবিনেট এই নীতি নির্ধারণ করে । অন্যদিকে রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসন ব্যবস্থায় এই দায়িত্ব মূলত রাষ্ট্রপতির হাতে থাকে।

 

2. অভ্যন্তরীণ শাসন সংক্রান্ত কার্যাবলী : আইন বিভাগ যেসব আইন প্রণয়ন করে  শাসন বিভাগ সেগুলিকে কার্যকর করে থাকে । বিচার বিভাগের জন্য আইনভঙ্গকারীকে বিচারালয়ের সম্মুখে উপস্থিত করা , বিচারের রায় অনুসারে অপরাধীকে শাস্তি দানের ব্যবস্থা করা প্রভৃতির মাধ্যমে শাসন বিভাগ দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করে । তাছাড়া সরকারি কর্মচারীদের নিয়োগ বদলি ও পদোন্নতি এবং পদচ্যুতি বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, জরুরি অবস্থার মোকাবিলা করার জন্য অর্ডিন্যান্স জারি প্রভৃতি শাসন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ কাজ । শাসন বিভাগের পক্ষে স্বরাষ্ট্র দপ্তর( Home Department) এইসব কাজ করে।


3. পররাষ্ট্রনীতি সংক্রান্ত কার্যাবলী : শাসন বিভাগের প্রধানই রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণ বা কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেন । নিজের কূটনৈতিক প্রতিনিধিকে অন্য রাষ্ট্রে প্রেরণ , অন্য রাষ্ট্রের কূটনৈতিক প্রতিনিধিকে গ্রহণ , রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদন , কোন রাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করা কিংবা কোন রাষ্ট্রের সঙ্গে এইরূপ সম্পর্ক ছিন্ন করা ইত্যাদি কাজ শাসন বিভাগ করে থাকে । এই জন্য যে বিশেষ দপ্তর থাকে তাকে বলে পররাষ্ট্র দপ্তর(Department of External Affairs) ।


4. বহিঃশত্রুর আক্রমণ রোধ : রাষ্ট্রকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করা শাসন বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ । সেনাবাহিনী পরিচালনা , যুদ্ধ ও শান্তি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ , যুদ্ধের সময় ব্যবস্থা গ্রহণ এই কাজগুলি শাসন বিভাগকে করতে হয়। যুদ্ধ ও প্রতিরক্ষার দায়িত্ব শাসন বিভাগের প্রতিরক্ষা দপ্তরের (Defence Department) ওপর ন্যস্ত থাকে।


5. আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত কার্যাবলী : মন্ত্রীপরিষদ-পরিচালিত শাসন ব্যবস্থায় শাসন বিভাগীয় প্রধান আইন সভার অধিবেশন আহ্বান করতে , স্থগিত রাখতে এবং প্রয়োজন মনে করলে আইনসভা ভেঙে  দিতে পারেন । আবার আইনসভার অধিবেশন বন্ধ থাকাকালীন প্রয়োজনে জরুরি আইন জারি করতে পারেন। বর্তমান দিনে আইনসভার কার্যাবলী বিশেষভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে আইনের  পুঙ্খানুপুঙ্খ বিষয়  গুলি নির্ধারণের ভার  আইনসভা শাসন বিভাগের হাতে অর্পণ করে । শাসন বিভাগ প্রণীত এইরূপ আইনকে অর্পিত ক্ষমতা প্রসূত (Delegated Legislation) আইন নামে অভিহিত করা হয়।


6. বিচার সংক্রান্ত কার্যাবলী‌ : আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিচারপতিদের নিয়োগ , তাঁদের পদোন্নতি,বদলি প্রকৃতির কাজ ও শাসন বিভাগ করে থাকে । বহু দেশে সরকারি কর্মচারীদের বিচারের জন্য প্রশাসনিক বিচারব্যবস্থা ও আছে । এটি পরিচালনা করে শাসন বিভাগ ।


7. আর্থিক কাজ : শাসন বিভাগকে আর্থিক কাজও করতে হয়  । কর আদায় , সরকারের   আয়ের ব্যবস্থা করা , আইনসভার অনুমোদন অনুসারে ব্যয় নির্বাহ , হিসাব পরীক্ষা ইত্যাদি কাজ শাসন বিভাগকে করতে হয় , শাসন বিভাগের অর্থ দপ্তর এই কাজ করে থাকে।


8. জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত কার্যাবলী : কোনো সংকটজনক পরিস্থিতির মোকাবেলার জন্য প্রায় প্রতিটি দেশের সংবিধানে শাসন বিভাগের প্রধানের হাতে জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হয় । ব্রিটেন-ফ্রান্স-কানাডা প্রভৃতি দেশে এরূপ ব্যবস্থা রয়েছে । ভারতীয় সংবিধানে 352, 356 ও 360 নং ধারায় রাষ্ট্রপতির হাতে তিন ধরনের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।


মূল্যায়ন : বর্তমানে কল্যাণকর রাষ্ট্রের পটভূমিতে রাষ্ট্রের কর্মপরিধি যতই বাড়ছে শাসন বিভাগের কর্মক্ষেত্রেও সমভাবে প্রসারিত হয়েছে কেবলমাত্র শাসন সংক্রান্ত কাজ নয় আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আইন বিভাগের ক্ষমতা অনেকটা শাসন বিভাগের হাতে চলে আসছে তাই অধ্যাপক গেটেল বলেছেন অদূর ভবিষ্যতে যতই রাজনীতির ক্ষেত্রে পরিবর্তন হবে ততই শাসন বিভাগের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।




Post a Comment

Previous Post Next Post