ভারতের অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও পদমর্যাদা | মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলী | Powers and functions of the Chief Minister.(2021)

 ভারতের একটি অঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও পদমর্যাদা আলোচনা করো।

                                                        অথবা 

মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা করো।


ভূমিকা


ভারতের অঙ্গরাজ্য গুলিতে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা থাকায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংসদীয় শাসন ব্যবস্থার রীতি অনুসারে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রের মত অঙ্গরাজ্য গুলিতেও প্রকৃত শাসন ক্ষমতা মন্ত্রীপরিষদের হাতে ন্যস্ত আছে ‌। এই মন্ত্রিসভার নেতা হলেন মুখ্যমন্ত্রী ‌। রাজ্যের প্রকৃত শাসক প্রধান হলেন মুখ্যমন্ত্রী। নরম্যান ডি পামারের  ভাষায় ––  "রাজ্যগুলিতে প্রকৃত শাসক মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের যার প্রকৃত অবস্থান প্রধানমন্ত্রীর অনুরূপ"


নিয়োগ


 মুখ্যমন্ত্রীর নিয়োগের ব্যাপারে সংবিধানে বিশেষ কিছু বলা নেই । সংবিধান অনুসারে রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়োগ করবেন [ 164(1)ধারা ] । তবে প্রকৃতপক্ষে অঙ্গরাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা নেই বললেই চলে । সাধারণত বিধানসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বা নেত্রীকেই  মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করতে হয় । মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্য আইনসভার যে কোন কক্ষের সদস্য হতে হয় । রাজ্য আইনসভার সদস্য নন, এমন কোনো ব্যক্তি মুখ্যমন্ত্রী পদে নিযুক্ত হলে তাকে 6 মাসের মধ্যে রাজ্য আইনসভার সদস্য হতে হয়। 


কার্যকাল


 মুখ্যমন্ত্রীর কার্যকালের সাধারণ মেয়াদ হল 5 বছর ।‌ অবশ্যই নির্দিষ্ট কার্যকাল পরিসমাপ্তির পূর্বে তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলে কিংবা পদচ্যুত হলে অথবা তার মৃত্যু ঘটলে মুখ্যমন্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য হতে পারে। রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রী কে অপসারণ করতে পারেন । তবে প্রকৃতপক্ষে রাজ্য আইনসভার কাছেই মুখ্যমন্ত্রীকে দায়িত্বশীল থাকতে হয়।



ক্ষমতা:-


বিধানসভার নেতা বা নেত্রী হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী :- 


মুখ্যমন্ত্রী হলেন রাজ্য বিধানসভার নেতা বা নেত্রী । রাজ্য আইনসভার কার্যতালিকা তার দ্বারা নিয়ন্ত্রণাধীন। তিনি রাজ্যপালের মাধ্যমে রাজ্য আইনসভার অধিবেশন আহ্বান , স্থগিত এবং প্রয়োজনবোধে ভেঙে দিতে পারেন।


রাজ্যপালের প্রধান পরামর্শদাতা:- 


রাজ্যপালের প্রধান পরামর্শদাতা হলেন মুখ্যমন্ত্রী । সংবিধানের 163 নং ধারায় বলা আছে মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত রাজ্য মন্ত্রিসভার শাসনকার্য পরিচালনায় রাজ্যপালকে পরামর্শ ও সহযোগিতা দান করবে । সংবিধানের 167 নং ধারায় অনুসারে, রাজ্য মন্ত্রিসভার গৃহীত সিদ্ধান্ত রাজ্যপাল কে জানাতে হবে।


মন্ত্রিসভার নেতা:-


 মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শে রাজ্যের মন্ত্রীদের নিয়োগ করা হয় । তারা যৌথভাবে কাজ করেন । কোনো মন্ত্রী  সংঙ্কট বা সমস্যার মুখোমুখি হলে মুখ্যমন্ত্রী তাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় । তাঁকে সমমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে অগ্রগণ্য বলে অভিহিত করা হয়।


দলের নেতা:-


গণতান্ত্রিক সরকারের অর্থ হল দল ব্যবস্থা রাজ্য সরকার গুলিতে কোনো না কোনো দল সংখ্যাগরিষ্ঠ লাভ করে । তারই  রাজ্য সরকার গঠন করে এবং সেই দলের নেতা হলেন মুখ্যমন্ত্রী।


রাজ্য জনগণের নেতা :-


যদি মুখ্যমন্ত্রী ব্যাপক অংশের জনগণের নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন তাহলে সেই মুখ্যমন্ত্রী সাফল্যের শীর্ষে অতি সহজেই নিজেকে উপস্থাপিত করতে পারেন। যেমন-পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায় এবং জ্যোতি বসুর নাম উল্লেখযোগ্য।


সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা :-


সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমতাসীন হন । আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের প্রভাবশালী নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়। দল  তাঁর পেছনে সমর্থন যোগায় । পরিবর্তে তার কাজের যোগ্য নেতৃত্ব এবং দলীয় প্রতিশ্রুতি পূরণের ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগ আশা করে । তাঁর ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদার উপর দলের শক্তি ও জনপ্রিয়তা নির্ভরশীল।


পদমর্যাদা 


অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও পদমর্যাদা বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল । সংবিধান নির্দিষ্ট সীমার মধ্যেই তার ক্ষমতা ও কৃতিত্ব সীমাবদ্ধ থাকেনা । শাসনতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক ভূমিকার পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা প্রয়োগ ও কৃতিত্বের পর্যালোচনা করা দরকার ।


  • দলগত সংগতি:-


 মুখ্যমন্ত্রীর পদমর্যাদা নির্ভরশীল নিজ দলের সাহায্য ও সংহতির উপর বিধানসভার ভেতরে ও বাইরে দলের সমর্থনের ব্যাপারে নিশ্চয়তা থাকলে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কৃতিত্ব বৃদ্ধি পায়।


  • রাজ্যপালের সঙ্গে সম্পর্ক:-


 রাজ্যপালের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টিও মুখ্যমন্ত্রীর পদমর্যাদা কে চিহ্নিত করে । রাজ্যপালের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে রাজ্য প্রশাসনের তিনি আরো ভালোভাবে দৃষ্টি দিতে পারেন।


  • কোয়ালিশন সরকারের মুখ্যমন্ত্রী 


 কোয়ালিশন সরকারের মুখ্যমন্ত্রী অনেক কম ক্ষমতা ও মর্যাদা ভোগ করে । কারণ সব সময় শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ও বিতর্কের এর মাধ্যমে তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।


উপসংহার 


মুখ্যমন্ত্রী যদি নিজ দলের অভ্যন্তরে ও বিধানসভায় শাসক দলের কাছে অবিসম্বদী নেতা  হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন এবং বিধানসভায় দলের অভ্যন্তরে ও রাজ্যপালের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের যথেষ্ট কৌশলী হতে পারেন । তবেই তিনি তার সাংবিধানিক ক্ষমতার ওপর সুবিচার করে , তাঁর পদের মর্যাদা রক্ষায় সমর্থ হবে।





                               https://politicalsciencenotesonline.blogspot.com


1 Comments

  1. Thank you very much for writing a very beautiful note

    ReplyDelete

Post a Comment

Previous Post Next Post