অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপালের ক্ষমতা ও পদমর্যাদা । রাজ্যপালের ক্ষমতা ও কার্যাবলী - Political Science Notes Online

অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপালের ক্ষমতা, কার্যাবলি ও পদমর্যাদা

  অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপালগণ রাষ্ট্রপতি কর্তৃক 5 বছরের জন্য মনোনীত হন ( 153ং ধারা ) । কার্যকাল পরিসমাপ্তির পূর্বে রাষ্ট্রপতি প্রয়োজনে রাজ্যপালকে পদচ্যুত করতে পারেন কিংবা রাজ্যপাল নিজেই পদত্যাগ করতে পারেন ।

রাজ্যপালের ক্ষমতা ও কার্যাবলি — 


( 1 ) শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতা : সংবিধান অনুসারে রাজ্যপাল রাজ্যের শাসন বিভাগের প্রধান হিসেবে- ( i ) রাজ্যের শাসন সংক্রান্ত যাবতীয় ক্ষমতার তত্ত্বগতভাবে অধিকারী । রাজ্যের যাবতীয় প্রশাসনিক কার্য তাঁর নামে সম্পাদিত হয় । ( ii ) রাজ্যের শাসনকার্য যাতে সঠিকভাবে সম্পাদিত হয় সেইজন্য প্রয়োজনীয় নিয়মাবলি প্রণয়ন করতে পারেন । ( iii ) নিজ রাজ্যে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য বা চ্যান্সেলার হিসেবে রাজ্যপালগণ কার্য সম্পাদন করেন ।


 ( 2 ) আইন সংক্রান্ত ক্ষমতা : অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপাল রাজ্য আইনসভার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে ( i ) মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাজ্য আইনসভার অধিবেশন আহ্বান করতে কিংবা স্থগিত রাখতে এবং প্রয়োজনে রাজ্য বিধানসভা ভেঙে দিতে পারেন । ( ii ) যেসব রাজ্যের আইনসভা এককক্ষবিশিষ্ট সেখানে বিধানসভা এবং যেসব রাজ্যের আইনসভা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সেখানে রাজ্য বিধানসভামণ্ডলীর যে - কোনো কক্ষ বা উভয় কক্ষের যৌথ - অধিবেশনে ভাষণ দিতে পারেন ।


 ( 3 ) অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতা : ( i ) রাজ্যপালের সম্মতি ছাড়া রাজ্য আইনসভায় কোনো ব্যয়বরাদ্দের দাবি পেশ ( 205 নং ধারা ) , কিংবা কোনো অর্থ বিল উত্থাপন ( 207 নং ধারা ) করা যায় না । ( ii ) রাজ্যের বাজেট বা বার্ষিক আয়ব্যয়ের বিবরণ তিনি অর্থমন্ত্রী মারফত আইনসভার কাছে উত্থাপন করেন ( 202 নং ধারা ) ।


 ( 4 ) বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা : আইনভঙ্গের অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীর দণ্ডাদেশ হ্রাস করা , স্থগিত রাখা , এমনকি তাকে ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা রাজ্যপালের রয়েছে ( 161 নং ধারা ) । তবে মৃত্যু দণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ক্ষমা প্রদর্শনের কোনো ক্ষমতা তাঁর নেই । 


( 5 ) স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা : সংবিধানের 163 নং ধারায় রাজ্যপালকে কিছু বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে । একে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা বলা হয় । এই ক্ষমতায় রাজ্যপালের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত । পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগ , বিধানসভা ভেঙে দেওয়া প্রভৃতি ক্ষেত্রে রাজ্যপাল স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা ভোগ করেন ।


 পদমর্যাদা : -

তত্ত্বগতভাবে অঙ্গরাজ্যের শাসন বিভাগের প্রধান হলেন রাজ্যপাল । বাস্তবে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা অনুসারে তিনি নিয়মতান্ত্রিক শাসক এবং মন্ত্রীসভা হল প্রকৃত শাসক । মন্ত্রীসভার পরামর্শে রাজ্যপালের নামে রাজ্যের শাসন পরিচালিত হয় । সরোজিনী নাইডু রাজ্যপালকে ‘ সোনার খাঁচায় বন্দি পাখি ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন । আবার পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল নুরুল হাসানের মতে , “ রাজ্যপালের পদ অর্থহীন নয় , রাজ্যপাল সংবিধান অনুসারে বহু প্রয়োজনীয় কার্যাবলি সম্পাদন করতে পারেন । ” তা ছাড়া সংবিধানের 163 ( 2 ) নং ধারা অনুসারে রাজ্যপাল যখন স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করেন এবং কেন্দ্রের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন , তখন তিনি মন্ত্রীসভার পরামর্শ অনুযায়ী চলতে বাধ্য নন । এই পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যপালকে সম্পূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক শাসক বলে অভিহিত করা চলবে না । তবে রাজ্যপালের পদমর্যাদা তাঁর ব্যক্তিত্ব ও বিচক্ষণতার ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে ।


Post a Comment

Previous Post Next Post