ভারতীয় পার্লামেন্টে আইন পাশের পদ্ধতি ব্যাখা করো। বিল পাশের পদ্ধতি ।আইন পাশের পদ্ধতি । Political Science Notes Online

  ভারতীয় পার্লামেন্টে আইন পাশের পদ্ধতি

 ভারতীয় সংবিধান অনুসারে কেন্দ্রীয় তালিকাভুক্ত বিষয় সম্পর্কে আইন প্রণয়নের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতি - সহ পার্লামেন্টের ওপর ন্যস্ত । আইনের প্রস্তাবকে বিল (Bill) বলে । 

সংবিধানের 107 নং ধারা অনুসারে অর্থবিল এবং অন্যান্য অর্থ সম্পর্কীয় বিল ব্যতীত অন্যান্য সমস্ত বিলই সংসদের যে কোনো কক্ষে উত্থাপন করা যায় । তবে বেসরকারি বিল উত্থাপনের আগে একমাসের মধ্যে একটি নোটিশ দিতে হয় এবং সংশ্লিষ্ট কক্ষের অনুমতির প্রয়োজন হয় । একটি সাধারণ বিল কয়েকটি পর্যায়ের মধ্যে শেষ হয়ে আইনে পরিণত হয় । পর্যায়গুলি হল— 


( 1 ) বিল উত্থাপন ও বিলের প্রথম পাঠ : কক্ষের স্পিকার বা চেয়ারম্যানের কাছে অনুমতি নিয়ে উত্থাপক সভায় বিল উত্থাপন করতে পারেন । এই পর্যায়ে শুধুমাত্র বিলের Title বা শিরোনাম পাঠ করা হয় । এরপর তাকে জনগণের অবগতির জন্য সরকারি গেজেটে প্রকাশ করা হয় । এই সময় বিলের ওপর সাধারণত কোনো আলোচনা বা বিতর্ক হয় না ।


 ( 2 ) বিলের দ্বিতীয় পাঠ : এই পর্যায়ে বিলের উত্থাপক প্রস্তাব করতে পারেন যে , ( i ) কক্ষ কর্তৃক বিলটির বিবেচনা করা হোক অথবা ( ii ) বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে প্রেরণ করা হোক , অথবা ( iii ) বিলটি উভয়কক্ষের একটি যুক্ত কমিটিতে বিবেচনার জন্য প্রেরণ করা হোক , অথবা , ( iv ) জনগণের মতামতের জন্য বিলটিকে প্রচার করা হোক । যদি বিলটি গৃহীত হয় তাহলে তার ধারা ও উপধারা নিয়ে আলোচনা ও তর্কবিতর্ক চলে এবং এই পর্যায়ে বিলের ওপর সংশোধন প্রস্তাব আনা যায় ।


 ( 3 ) কমিটি পর্যায় : বিলটিকে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো হলে কক্ষের সদস্যদের মধ্যে একজন সভাপতি - সহ কয়েকজন সদস্য নিয়ে এই কমিটি গঠিত হয় । কমিটি প্রথমে সাধারণভাবে এবং পরে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিলটির প্রত্যেকটি ধারা ও উপধারার বিবেচনা করে । 


( 4 ) রিপোর্ট পর্যায় : কমিটি বিলটির বিভিন্ন ত্রুটিবিচ্যুতি , অসংগতি বিবেচনা করে তার রিপোর্ট তৈরি করে এবং কমিটির চেয়ারম্যান বিলটি সংশ্লিষ্ট কক্ষের কাছে উপস্থিত করেন । সাধারণভাবে বিলটি পুনরায় আলোচনার জন্য সভায় গৃহীত হয় ।


 ( 5 ) বিচার বিবেচনা পর্যায় ও বিস্তৃত আলোচনা : কমিটি কর্তৃক পাঠানো রিপোর্ট আলোচনার প্রস্তাব ভোটে গৃহীত হলে বিলের প্রতিটি ধারা ও উপধারা সম্পর্কে বিস্তৃতভাবে আলোচনা চলে । 


( 6 ) বিলের তৃতীয় পাঠ : বিলের প্রত্যেক ধারা ও উপধারা সম্পর্কে আলোচনা ও ভোট গ্রহণ শেষ হলে সামগ্রিকভাবে বিলটিকে গ্রহণ বা বর্জন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় । সংশ্লিষ্ট কক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সম্মতি লাভ করলেই বিলটি এই কক্ষে গৃহীত হয় ।


 ( 7 ) অন্য কক্ষের বিবেচনা : এককক্ষে গৃহীত হওয়ার পর বলটি অপর কক্ষে পাঠানো হয় । অপরকক্ষে বিলটিকে পূর্বোক্ত প্রত্যেকটি পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয় । যদি অপরকক্ষ বিলটি প্রত্যাখ্যান করে অথবা 6 মাস ধরে কোনো মতামত প্রকাশ না করে তাহলে রাষ্ট্রপতি যুগ্ম অধিবেশন ডাকেন এবং উভয় কক্ষের সদস্যদের ভোটে বিলটির ভাগ্য নির্ধারিত হয় । বিলটি অপরকক্ষ কর্তৃক অনুরুপ পদ্ধতিতে গৃহীত হলে রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য পাঠানো হয় । 


( ৪ ) রাষ্ট্রপতির সম্মতি : রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরিত বিলে তিনি সম্মতি দিলে বিলটি আইনে পরিণত হয় । অবশ্য রাষ্ট্রপতি বিলে সম্মতি দিতে পারেন , আবার নাও দিতে পারেন । অর্থবিল ছাড়া অন্যবিলকে তিনি পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরতও পাঠাতে পারেন । এরূপ ক্ষেত্রে পার্লামেন্টের উভয়কক্ষ যদি পুনরায় বিলটিকে পাস করে তাহলে রাষ্ট্রপতি বিলটিতে সম্মতি জানাতে বাধ্য ।


Post a Comment

Previous Post Next Post