ভারতের বিচারব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য(Salient Features of the Indian Judiciary System) - Political Science Notes Online

 ভারতের বিচারব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ আলােচনা করাে । 



ভূমিকা


 প্রতিটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিচারব্যবস্থার গুরুত্ব অসীম । ভারত তার ব্যতিক্রম নয় । ব্যক্তিস্বাধীনতার সংরক্ষণ , আইনভঙ্গকারীকে শাস্তি দেওয়া , সংবিধানের পবিত্রতা রক্ষা করা ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে বিচার বিভাগ গণতন্ত্রের স্বরূপ বজায় রাখে ।




ভারতের বিচারব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য 


 ভারতের বিচারব্যবস্থার কতকগুলি বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় । এগুলি হল––


 ( 1 ) অখণ্ড বিচারব্যবস্থা : সমগ্র ভারতের জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ ও সংহত বিচারব্যবস্থার প্রচলন করা হয়েছে — একেই অখণ্ড বিচারব্যবস্থা বলা হয় । এককেন্দ্রিক ব্যবস্থায় এরূপ একটি অখণ্ড বিচারব্যবস্থার প্রচলন থাকতে পারে । কিন্তু ভারতের মতাে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামােতে একটি অখণ্ড বিচারব্যবস্থার প্রচলন অভিনব । 



( 2 ) পিরামিডাকার বিচারব্যবস্থা : ভারতের বিচারব্যবস্থা পিরামিডতুল্য । এর সর্বোচ্চ স্তরে রয়েছে সুপ্রিমকোর্ট , পরবর্তী স্তরে রাজ্যের হাইকোর্ট সমূহ । এর নীচের স্তরে প্রতিটি জেলায় জেলা ও জেলা দায়রা জজের আদালত রয়েছে । তাঁরও নীচে রয়েছে বিচারবিভাগীয় জজ আদালত , মুনসেফ আদালত , নগর আদালত এবং সবচেয়ে নীচের স্তরে রয়েছে । পঞ্চায়েত আদালত ও লােক আদালত ।

 

( 3 ) দুর্বল বিচারব্যবস্থা : ভারতের সুপ্রিমকোর্ট মার্কিন সুপ্রিকোর্টের মতাে আইনের নীতি ও যৌক্তিকতা বিচার করতে পারে না । অর্থাৎ , ন্যায়নীতি বিরােধী কোনাে আইনকে বাতিল করতে পারে না । 


( 4 ) জুরি ব্যবস্থার অনুপস্থিতি : ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য জুরির সাহায্যে বিচারকার্য পরিচালিত হওয়া প্রয়ােজন । কিন্তু ভারতে জুরির সাহায্যে বিচারব্যবস্থার প্রচলন নেই ।


 ( 5 ) মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ : ভারতের বিচার বিভাগের হাতে মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের অধিকার দেওয়া হয়েছে । সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্ট রাইটস ( writs ) জারির মাধ্যমে মৌলিক অধিকারের ওপর । হস্তক্ষেপ করলে তার প্রতিবিধান করতে পারে ।

 

( 6 ) দীর্ঘসূত্রতা : ভারতীয় বিচারব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল দীর্ঘসূত্রতা । এক একটি মামলার নিষ্পত্তি হতে অনেক সময় লেগে যায় । অনেক ক্ষেত্রে মামলার নিষ্পত্তি হতে 10 থেকে 12 বছর কেটে যায় । ফলে সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিপুল পরিমাণ মামলা জমতে থাকে। এর কারণ হলো ভারতীয় বিচারব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা।


 ( 7 ) ব্যয়বহুল : ভারতীয় বিচারব্যবস্থা অত্যন্ত ব্যয়বহুল । এখানে ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য যেমন দীর্ঘ সময় লাগে , ঠিক তেমনি উকিলের পেছনেও বহু টাকা ব্যয় করতে হয় । ফলে অনেক সময় দরিদ্র ও দুর্বল শ্রেণির লােক ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয় । তাই ভারতীয় বিচার ব্যবস্থাকে ব্যয়বহুল বিচারব্যবস্থা বলে অনেকেই সমালোচনা করেন।


 ( ৪ ) লােক আদালত : ভারতের বিচারব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল লােক আদালতের অবস্থান । অল্পব্যয়ে ও কম সময়ে নাগরিকদের কাছে ন্যায়বিচার পৌছে দেওয়াই হল লােক আদালতের প্রধান উদ্দেশ্য । 


(9) ভ্রাম্যমাণ আদালত নেই: যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রাম্যমান আদালত রয়েছে । কিন্তু ফ্রান্সের মতো ভারতেও এরূপ আদালতের কোনো অস্তিত্ব নেই । ফলে আদালতের কাছে উপস্থিত হয়ে অভিযোগকারীদের অভিযোগ জানাতে হয় । বিচারপতিরা অভিযোগ শোনার জন্য অভিযোগকারীদের কাছে যান না।


(10) দরিদ্রদের স্বার্থের পরিপন্থী : সরকারি ব্যয় মামলা চালানোর কোনো ব্যবস্থা ভারতে নেই । তাই বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে মামলা চালানোর দরিদ্র ভারতবাসীর পক্ষে সম্ভব হয় না। ফলে মামলা লড়ার মত অর্থ না থাকায় অনেক ক্ষেত্রে ধনশালী অপরাধীরা কেবল টাকার জোরে মামলায় জয় লাভ করে এবং নিরপরাধ দরিদ্ররা পরাজিত হয়।


(11) দুর্বল যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত : ভারতীয় সুপ্রিমকোর্ট দেশের সর্বোচ্চ আদালত হলেও তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিমকোর্টের মতাে ব্যাপক ক্ষমতার অধিকারী নয় । মার্কিন সুপ্রিমকোর্টের মতাে ভারতের সুপ্রিমকোর্ট আইন সভা - প্রণীত যেকোনাে আইনকে সংবিধান বিরােধী বলে বাতিল করে দিতে পারে । কিন্তু মার্কিন সুপ্রিমকোর্ট আইনের যথাবিহিত পদ্ধতি ( Due Process of Law ) অনুসারে যেমন কোনাে আইন স্বাভাবিক ন্যায়নীতিবােধের বিরােধী কি না , তা বিচার করতে পারে , ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টের হাতে সেরূপ ক্ষমতা অর্পিত হয়নি । তা ছাড়া , জরুরি অবস্থার সময় জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা করার কোনাে ক্ষমতা হাইকোর্ট কিংবা সুপ্রিমকোর্টের নেই । 


(12) বিচার বিভাগের ওপর শাসন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ : ভারতে পূর্ণ ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতি গৃহীত না হলেও শাসন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচার বিভাগকে মুক্ত রাখার কথা সংবিধানে বলা হয়েছে ( ৫০ নং ধারা ) । কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যায় , বিচারপতিদের নিয়ােগের ক্ষেত্রে শাসন বিভাগের , বিশেষত প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা বিশেষভাবে ক্রিয়াশীল থাকে । উদাহরণ হিসেবে ১৯৭৩ সালে বিচারপতি নিয়ােগের ক্ষেত্রে প্রচলিত প্রথা উপেক্ষা করে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে রাষ্ট্রপতি বিচারপতি শেলাত , হেজ ও গ্রোভারের প্রবীণতা উপেক্ষা করে এ . এন . রায়কে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়ােগ করেন । অনুরূপভাবে , ১৯৭৭ সালে বিচারপতি এইচ . আর . খান্নাকে অতিক্রম করে এম . এইচ . বেগকে সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়ােগ করা হয় ।




 মূল্যায়ন : পরিশেষে বলা যায় , বিচার বিভাগের ভূমিকা রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল । অনেক সময় লক্ষ করা যায় বিচার বিভাগ নিরপেক্ষতার আড়ালে বিদ্যমান শ্রেণিসম্পর্ককে বজায় রাখার চেষ্টা করছে । এর ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । সে - কারণে ভারতের বিচারব্যবস্থার আরও প্রসারণ বাঞ্ছনীয় ।







Post a Comment

Previous Post Next Post