জাতীয় স্বার্থের সংজ্ঞা দাও । জাতীয় স্বার্থ রক্ষার উপায় সমূহ আলোচনা করো। (2021)

 জাতীয় স্বার্থ বলতে কী বোঝো ? জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য কি কি পদ্ধতি বা উপকরণ ব্যবহার করা হয়ে থাকে আলোচনা করো‌।


                         অথবা


জাতীয় স্বার্থের সংজ্ঞা দাও । জাতীয় স্বার্থ রক্ষার উপায় সমূহ আলোচনা করো।




জাতীয় স্বার্থ (National Interest)


আন্তর্জাতিক রাজনীতির অন্যতম মৌলিক ধারণা হলো জাতীয় স্বার্থ। সাধারণভাবে জাতীয় স্বার্থ বলতে 'যাবতীয় জাতীয় মূল্যবোধের সমষ্টি '– কে বোঝায় । এক্ষেত্রে 'জাতীয়' বলতে জাতি এবং রাষ্ট্র উভয়কে বোঝানো হয়েছে । কিন্তু জোসেফ ফ্র্যাঙ্কেল জাতীয় স্বার্থের ধারণাটিকে অস্পষ্ট বলে চিহ্নিত করেছেন ।  জোসেফ ফ্র্যাঙ্কেল বলেছেন জাতীয় স্বার্থ হলো জাতীয় মূল্যবোধের সমষ্টি । প্লেটোর অভিমত অনুযায়ী দার্শনিক রাজা ও অভিভাবক শ্রেণীর মতানুসারে নগররাষ্ট্রের স্বার্থের সহায়ক সবকিছুই হল জাতীয় স্বার্থ । কৌলোমবিষ উলফ  এর মতানুসারে , জাতীয় স্বার্থ হলো জাতি–রাষ্ট্র সমূহের সমন্বয় । মরগেন থাউ  বলেছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির মূল সারবস্তু হলো জাতীয় স্বার্থ । তাঁর মতে , যেকোন দেশের কতকগুলি ন্যূনতম স্বার্থ থাকে, যেমন-ভৌগলিক অখন্ডতা রক্ষা, প্রচলিত রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সুরক্ষিত করা এবং তার সংস্কৃতিক সত্ত্বা বজায় রাখা এই সকল স্বার্থ পূরণই হলো পররাষ্ট্র নীতির লক্ষ্য।

সুতরাং জাতীয় স্বার্থ বলতে জাতির সেইসব ন্যূনতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহকে বোঝায় , যেগুলি পূরণের জন্য রাষ্ট্রসমূহ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে । এইসব ন্যূনতম লক্ষ্যের মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা জাতীয় উন্নয়ন ও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা বিশেষ উল্লেখযোগ্য।



জাতীয় স্বার্থ রক্ষার উপায় সমূহ:-


জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য কূটনীতি, জোটগঠন,প্রচারকার্য ,আর্থিক সাহায্য এবং বলপ্রয়োগে 5 টি উপকরণ ব্যবহার করা হয়।


কূটনীতি:-


জাতীয় স্বার্থ রক্ষার অন্যতম প্রধান উপায় হলো কূটনীতি। প্রতিটি রাষ্ট্রের কূটনীতিবিদরা নিজেদের সরকারের বিদেশনীতিকে অন্য রাষ্ট্রের কাছে বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য আলাপ-আলোচনা করে । কূটনীতিবিদদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য পামার ও পারকিনস্  তাদের নিজ নিজ দেশের সরকারের চক্ষু ও কর্ণ বলে চিহ্নিত করেছেন।


জোটগঠন:-


দুই বা ততোধিক রাষ্ট্রগুলি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিজেদের জাতীয় স্বার্থ পূরণ করার জন্য জোট গঠন করে থাকে। অনেক সময় নিজের শক্তি বৃদ্ধির জন্য একটি রাষ্ট্র জোট গঠনের পথে পা বাড়ায় । আবার জোট গঠনের ফলে কোন রাষ্ট্র শক্তিশালী হয়ে উঠলে তাকে প্রতিহত করে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী জোট গড়ে উঠতে দেখা যায়। যেমন – ঠান্ডা যুদ্ধের সময়ে পুঁজিবাদী দেশগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটো(NATO) নামক সামরিক জোট গঠন করে।  এর লক্ষ্য ছিল সাম্যবাদকে প্রতিহত করা।


প্রচারকার্য:-


প্রচারকার্য হলো জাতীয় স্বার্থ রক্ষার অন্যতম প্রধান উপায়। প্রত্যেক দেশের সরকার আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিজেদের দেশের পররাষ্ট্র নীতির পক্ষে গণমাধ্যম সমূহের সাহায্যে ব্যাপক প্রচারকার্য পরিচালনা করে। এর উদ্দেশ্য বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান, জনসাধারণ ও বিশ্ব জনমতকে প্রবাহিত করা।


অর্থনৈতিক সাহায্য:-


শক্তিশালী দেশ গুলি উন্নয়নশীল দেশ গুলিকে আর্থিক সাহায্য ও ঋণ দানের মাধ্যমে নিজেদের জাতীয় স্বার্থ পূরণ করে থাকে। যেমন – চীন এশিয়াতে নিজের বাজার তৈরীর জন্য পাকিস্তানকে পরমাণু প্রযুক্তি দিয়ে ও শ্রীলঙ্কাকে হাসপাতাল ও এয়ারপোর্ট তৈরি করার জন্য অর্থ সাহায্য করে দিতে নিজের বাজার তৈরি করেছে।


বলপ্রয়োগ:-


আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিজেদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য রাষ্ট্রগুলি বল প্রয়োগ বা বলপ্রয়োগের ভীতি প্রদর্শন করে থাকে। যেমন–1965 সালে কাশ্মীর দখলের জন্য পাকিস্তান ভারত আক্রমণ করেছিল । আবার অনেক সময় শক্তিধর বা মহাশক্তিধর রাষ্ট্র গুলির নিজেদের জাতীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে অন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে । যেমন–মধ্যপ্রাচ্যের খনিজ তেল বিক্রয় করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরাক আক্রমণ করেছিল।




উপসংহার 


 নিজেদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে একটি রাষ্ট্র উপরিক্ত উপায় গুলির মধ্যে যেকোন এক বা একাধিক উপায় অনুসরণ করতে পারে। প্রকৃতপক্ষে জাতীয় রাষ্ট্রের অস্তিত্ব যতদিন বজায় থাকবে , ততদিন জাতীয় স্বার্থের ধারণা কে কোনভাবেই বর্জন করা যাবে না । তবে বিশ্বশান্তি রক্ষা প্রতিটি দেশের জাতীয় স্বার্থ রক্ষার প্রধান মাধ্যম হওয়া উচিত।




https://politicalsciencenotesonline.blogspot.com





                             –––––––




1 Comments

  1. Thank you so much for posting so many helpful posts stay with us this way.

    ReplyDelete

Post a Comment

Previous Post Next Post