গান্ধীজীর রাষ্ট্র তত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা করো । গান্ধীজীর রাষ্ট্র চিন্তা

 গান্ধীজীর রাষ্ট্র তত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা করো ।

                অথবা

 রাষ্ট্র সম্পর্কে গান্ধীজীর ধারণা আলোচনা করো ।



ভূমিকা 


মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও দার্শনিক সত্য ও অহিংসার আদর্শকে সামনে রেখে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য তিনি যে পদ্ধতি ও নীতি অবলম্বন করেছিলেন তার সেই সত্যাগ্রহ আন্দোলন ভারতবাসীর অন্তরে গণজাগরণের ঢেউ এনে দিয়েছিল । তার রাষ্ট্রতত্ত্ব, রাষ্ট্রহীন গণতন্ত্রের ধারণা , সর্বোদয় ধারণা গুলি গান্ধীবাদ নামে পরিচিত।


              গান্ধীজীর রাষ্ট্রচিন্তা কতগুলি রাষ্ট্র উপাদানের উপর নির্ভরশীল সেগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল–––


1. রাষ্ট্র মানে দমন ক্ষমতা :-


গান্ধীজী সব ধরনের হিংসাকে পরিত্যাগ করেছেন । তাঁর মতে , রাষ্ট্র মানে দমন ক্ষমতা গান্ধীজীর রাষ্ট্র বিরোধিতার উৎস এটাই । রাষ্ট্রের মূল কথা ক্ষমতা । আধুনিক রাষ্ট্র সীমাহীন ক্ষমতা ভোগ করে রাষ্ট্রের এই ক্ষমতা আসলে সংগঠিত হিংসা , হিংসাকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রের কথা ভাবা যায় না।


2. বিনাশের কারণ :-


রাষ্ট্র মানুষের সবচেয়ে ক্ষতি করে , ব্যক্তির বিনাশ  ঘটায় । অথচ সমস্ত প্রগতির মূলে থাকে ব্যক্তি । ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে সমাজ  চলতে পারে না । সমাজের কল্যাণের অর্থ ব্যক্তির কল্যাণ কিন্তু রাষ্ট্র হিংসার বাহন বলে ব্যক্তির সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক বিরোধি । গান্ধীজি সার্বভৌম ক্ষমতার দাবির ও সমালোচনা করেছেন ।


3. রাষ্ট্র ও ব্যক্তির সম্পর্ক:-


রাষ্ট্র ও ব্যক্তির সম্পর্কের বিষয়টি গান্ধীজীর রাষ্ট্রচিন্তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ  । গান্ধীজীর মতে ,  রাষ্ট্রের কোনো  আইন যদি ঈশ্বরের আইন বিরোধী হয়,  তাহলে ব্যক্তির কর্তব্য হলো সে আইন অমান্য করা । "হিন্দু স্বরাজ" -এ  তিনি লিখেছেন , 'আমরা যদি আমাদের বিবেকের বিরুদ্ধে কোনো আইন কে মান্য করি তাহলে তা হবে মানুষ্যত্ব বিরোধী ।


4. রাষ্ট্র ও সমাজ :-


গান্ধীজী রাষ্ট্র ও সমাজকে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন মনে করেছেন । তাঁর কাছে ব্যক্তি সমাজের কাছে এবং নিজের নৈতিক সত্তার কাছে দায়বদ্ধতা রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান । এই দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতার বিরোধিতা করেছেন । তাঁর মতে প্রকৃত সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হলো জনগণ ।


5. গান্ধীজি ও গণতন্ত্র:-


 গান্ধীজি ও গণতন্ত্র বিশেষ করে পশ্চিমী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন । গান্ধীজীর মতে , হিংসার পরিবেশের মধ্যে গণতন্ত্রের বিকাশ অসম্ভব । একমাত্র অহিংসার পরিমণ্ডলে গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারে । পশ্চিমী গণতন্ত্রকে তিনি স্বতন্ত্র আখ্যা দিয়েছেন ।

6. রাষ্ট্রহীন গণতন্ত্র:- 


গান্ধীজী মনে করতেন  যে , সত্যিকারের গণতন্ত্র তখনই প্রতিষ্ঠিত হবে , যখন সাধারন মানুষ নৈতিক কৃতিত্বের ভিত্তিতে সার্বভৌমত্ব পাবে । এটি তখনই সম্ভব যখন অহিংসা হবে মূলমন্ত্র ।


                               তিনি রাষ্ট্রহীন গণতন্ত্রের কথা বলেছেন । রাষ্ট্রহীন গণতন্ত্রের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেছেন যে, জাতীয় জীবনে সবাই সুনিয়ন্ত্রিত হলে তখন আর প্রতিনিধির প্রয়োজন হবে না । আদর্শ রাষ্ট্রের কোনো রাজনৈতিক ক্ষমতা থাকে থাকবে না । কেননা রাষ্ট্রই  থাকবে না । তবে গান্ধীজী একেবারে রাষ্ট্রের প্রয়োজনকে অস্বীকার করেননি ।


উপসংহার 


গান্ধীজী মার্কসবাদীদের মতো রাষ্ট্রকে দমন যন্ত্র বলে বর্ণনা করেছেন । তাঁর রাষ্ট্রের বর্ণনা ও মার্কসের  রাষ্ট্রের চরিত্র বর্ণনা মধ্যে সাদৃশ্য আছে । গান্ধীজীর রাষ্ট্রহীন সমাজের কথা বলেছেন । মার্কস-সাম্যতান্ত্র রাষ্ট্রহীন সমাজের কথা বলেছেন । কাজেই বলা যায় যে , উভয়ের চিন্তার মধ্যে বেশ কিছু সাদৃশ্য আছে ।




গ্রন্থপঞ্জি :

  1. রাষ্ট্রবিজ্ঞানের রূপরেখা – নিমাই প্রমানিক 

  2. আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান – অনাদি কুমার মহাপাত্র






                                    https://politicalsciencenotesonline.blogspot.com



Post a Comment

Previous Post Next Post