উদারনীতিবাদ বলতে কি বোঝো? উদারনীতিবাদের মূলনীতি গুলি আলোচনা করো।
অথবা
উদারনীতিবাদের মূল বৈশিষ্ট্য গুলো ব্যাখা করো ।
অথবা
উদারনীতিবাদের মূলসূত্র গুলি আলোচনা করো।
![]() |
উদারনীতিবাদ
রাজনৈতিক আলোচনার সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাচীন মতবাদ হলো উদারনীতিবাদ । উদারনীতিবাদ হলো এমন 'একটি স্বাধীন জীবনের কণ্ঠস্বর'(the voice of a free life), যা ব্যক্তির চিন্তা, বিশ্বাস, মতপ্রকাশ প্রভৃতি ক্ষেত্রে সর্বাধিক পরিমাণ স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়ায় । রাষ্ট্রবিজ্ঞানে উদারনীতিবাদ এর সাধারণ অর্থ হলো রাষ্ট্রীয় কতৃত্ববাধের বিরুদ্ধে ব্যক্তিস্বাধীনতার নীতি প্রতিষ্ঠা । আধুনিক ও উন্নতমানের সভ্যতা-সংস্কৃতির উপযোগী একমাত্র রাজনৈতিক চিন্তা দর্শন হলো উদারনীতি । এই মতবাদে ব্যক্তিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় ।
উদারনীতিবাদ মনে করে আগে ব্যক্তি পরে রাষ্ট্র । এই মতবাদ অনুসারে ব্যক্তির জন্য, রাষ্ট্রের জন্য ব্যক্তি নয় । 'Greatest Good of the Greatest Number ' সর্বাধিক মানুষের সর্বাধিক কল্যাণ সাধনই উদারনীতিবাদের মূল লক্ষ্য । 1776 সালে আমেরিকার স্বাধীনতা ঘোষণা ও 1789 সালে ফরাসি মানবাধিকার সংক্রান্ত ঘোষণায় উদারনীতিবাদের আদর্শ বাস্তব রূপ লক্ষ্য করা যায় ।
উদারনীতিবাদের মূলনীতি / মূল সূত্র / মূল বৈশিষ্ট্য :-
উদারনীতি বাদের মূলসূত্র গুলি নিম্নে আলোচনা করা হল ––––
1. রাজনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠা:-
উদারনীতিবাদের মূলনীতি গুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নীতি হলো রাজনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠা । উদারনীতিবাদ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সমাজের সর্বস্তরে রাজনৈতিক সাম্যের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে।
2. রাজনৈতিক ও পৌর অধিকারের স্বীকৃতি:
উদারনীতিবাদ সুষ্ঠু ও সবল জনমত গঠনের জন্য নাগরিকদের রাজনৈতিক ও পৌর অধিকারকে স্বীকৃতি প্রদানের পক্ষপাতী । এইসব অধিকারের মধ্যে স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশের অধিকার , সভা-সমিতি করার অধিকার , সরকারি কাজের সমালোচনা করার অধিকার, জীবনের অধিকার ,ধর্মের অধিকার, শিক্ষার অধিকার ,সামাজিক সাম্যের অধিকার, নির্বাচন করার ও নির্বাচিত হওয়ার অধিকার ইত্যাদি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয় ।
3. জনমত:-
আধুনিক উদারনীতিবাদ সুস্থ ও সবল জনমত গঠনের সহায়ক আর জনমত যদি সুস্থ না হয় তাহলে গণতন্ত্রের অপমৃত্যু ঘটবে ।
4. সাংবিধানিক উপায় সরকার পরিবর্তন:-
উদারনীতিবাদের অন্যতম নীতি হলো শান্তিপূর্ণ ও সাংবিধানিক উপায় নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন করা উদারনীতিবাদের সমর্থকরা বৈপ্লবিক উপায় রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের বিরোধী ।
5. সার্বিক ভোটাধিকার:-
উদারনীতিবাদ সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারকে স্বীকার করে । এভাবে জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় জাতি-ধর্ম-বর্ণ , স্ত্রী-পুরুষ , ধনীনির্ধন-নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিক ভোটাধিকার পায়।
6. সামাজিক স্বাধীনতা:-
উদারনীতিবাদের সামাজিক স্বাধীনতার দাবি তোলা হয়েছে । সামাজিক সম্পর্কগত কৃত্রিম বৈষম্য দূর করার জন্য ।
7. ন্যায় প্রতিষ্ঠা :-
উদারনীতিবাদ ন্যায় প্রতিষ্ঠায় বিশেষভাবে আগ্রহী । "আইনের অনুশাসন" কে উদারনীতিবাদীরা গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনের অপরিহার্য শর্ত বলে মনে করেন । আইনের দৃষ্টিতে সাম্য এবং আইন কর্তৃক সম ভাবে সংরক্ষন ছাড়া সমাজের মধ্যে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না বলে এরূপ উদারনীতিবাদীদের এর ধারণা ।
8. নিরপেক্ষ আদালত:-
উদারনীতিবাদের ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব একটি নিরপেক্ষ আদালতের হাতে অর্পণ করার পক্ষপাতি । আদালত একদিকে যেমন সংবিধানের রক্ষাকর্তা ও ব্যাখ্যাকর্তা হিসেবে কাজ করবে , অন্যদিকে তেমনি নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করবে ।
9. একদলীয় ব্যবস্থার বিরোধিতা:-
উদারনীতিবাদে একদলীয় ব্যবস্থার বিরোধিতা করা হয়েছে । কারণ একাধিক রাজনৈতিক দল না থাকলে জনগণের বিভিন্ন প্রকার আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত হতে পারে না ।
9. ধর্মনিরপেক্ষতা :-
ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ হল প্রত্যেকে তার নিজের বিশ্বাস অনুযায়ী ধর্ম পালন করবে । রাষ্ট্র কোনো বিশেষ ধর্মের প্রতি পক্ষপাতিত্ব বা সুযোগ সুবিধা প্রদান করবে না।
10. আইনগত পৌর স্বাধীনতা :-
" প্রত্যেক ব্যক্তি নির্দিষ্ট আইন অনুসারে শ্বাসিত হবে"–– এ হলো উদারনীতিবাদের প্রাথমিক দাবি দাবি । এই দাবি হলো আইনগত পৌর স্বাধীনতার দাবি । এর মাধ্যমে উদারনীতি সর্বপ্রকার স্বৈরাচারী দূর করতে চায় ।
উপসংহার:
উদারনীতিবাদই প্রথম মানবতাবাদি দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম দিয়েছে । সাম্য , মৈত্রী ও ভালবাসার বাণী প্রচার করেছে । এটি একটি প্রগতিশীল জীবনাদর্শ ।
–– TAPAN MANDAL
Great note, thank you for helping me a lot.
ReplyDeletePost a Comment