বিচারবিভাগীয় সমীক্ষা বলতে কী বোঝো ? বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা কীভাবে সংরক্ষিত হয় তা ব্যাখা করো ‌‌।

বিচারবিভাগীয় সমীক্ষা বলতে কী বোঝো ? বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা কীভাবে সংরক্ষিত হয় তা ব্যাখা করো ‌‌।




বিচার বিভাগীয় সমীক্ষা


বিচার বিভাগীয় সমীক্ষা বলতে বোঝায় সংবিধানের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো আইন ন্যায় সংগত কিনা তা বিচার করা। আইন বিভাগ ,শাসন বিভাগ যদি কোনো সংবিধান বিরোধী আইন বা আদেশ জারি করে তাহলে, সেই আইন বা আদেশকে বিচার বিভাগ বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে সেই আইন বা আদেশকে সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে অবৈধ ঘোষণা করতে পারে । বিচার বিভাগের এই ক্ষমতাকেই বিচার বিভাগীয় সমীক্ষা বলা হয়।

     

        বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার ক্ষেত্রে ভারতের সংবিধান মার্কিনরীতির উপর অনেকটা নির্ভরশীল । সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন । তাই কেন্দ্র ও রাজ্যের যেকোনো আইন সংবিধানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া উচিত । সুপ্রিমকোর্ট আইনের বৈধতা বিচারের ক্ষমতাবলে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের যেকোন আইন , চুক্তি যদি সংবিধান সম্মত না হয় তবে তা বাতিল করে দিতে পারে।


বিচারবিভাগীয় স্বাধীনতা


স্বাধীন বিচার ব্যবস্থায় ব্যক্তির অধিকার ও স্বাধীনতাকে মর্যাদা দিতে পারে । গণতন্ত্রকে মজবুত দৃঢ়  করতে পারে । এর জন্য ভারতীয় সংবিধানে বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে । নিরপেক্ষ, নির্ভীক, নির্লোভ , দুর্নীতিমুক্ত  বিচার ব্যবস্থার জন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অপরিহার্য্য । বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য ভারতে কতগুলি সাংবিধানিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে‌ । যেমন––

 

1. বিচারক নিয়োগ


 বিচারপতিদের নিয়োগ পদ্ধতির ওপরেই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা বহুলাংশে নির্ভরশীল। বিচারক নিয়োগ পদ্ধতি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংরক্ষণের সহায়ক।  বিভিন্ন স্তরে বিচারপতিদের নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতিদের সঙ্গে পরামর্শ করেন।


2. বিচারপতিদের যোগ্যতা


সুযোগ্য বিচারপতিরা কেবল সুষ্ঠুভাবে বিচারকার্য সম্পাদন করতে পারেন। বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতা দেখা হয় । আইনজ্ঞ ,সৎ, সাহসী এবং দলীয় রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্পর্কহীন ব্যক্তিরা যদি বিচারপতি পদে সমাসীন হন, তবে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব।


3. বিচারপতিদের কার্যকাল


 বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংরক্ষণের জন্য বিচারপতিদের কার্যকালের স্থায়িত্ব একান্ত প্রয়োজন । কার্যকালের স্থায়িত্ব বিচারপতিদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। বিচারপতিরা শাসন বিভাগ কর্তৃক নিযুক্ত হন এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নিজের পদে বহাল থাকেন।


4. স্বতন্ত্রতা


 ভারতের সংবিধানে সমস্ত বিচারবিভাগীয় কর্মচারীদের অন্যান্য বিভাগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে । এই ব্যবস্থা করা হয়েছে  বিচার বিভাগের স্বতন্ত্র ও স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য। অধ্যাপক লাস্কির মতে , স্বাধীনতা সংরক্ষণের জন্য বিচার বিভাগের স্বাতন্ত্র অত্যাবশ্যক ।


5. বিচারকের রায় সমালোচনার ঊর্ধ্বে


বিচারকের রায় কে সমালোচনা করা যায়না । বিচারকরা যাতে নির্ভয়ে ও নির্দ্বিধায় সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তার জন্য এই ব্যবস্থা করা হয়েছে । পার্লামেন্টের বিচারপতিদের কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করা যায়না (121নং ধারা)।


6. বিচারপতিদের অপসারণ 


বিচারপতিদের অপসারণ করার পদ্ধতির উপর বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বহুলাংশে নির্ভর করে। তাই নির্দিষ্ট বয়স সীমা পর্যন্ত বিচারপতিদের পদচ্যুত করা যায় না । এই জন্য বিচারপতিরা নির্ভয়ে বিচারকার্য পরিচালনা করে ।


7. বিচারপতিদের  উপযুক্ত পরিমাণ বেতন, ভাতা 


বিচারপতিদের বেতন ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা উপর বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা বহু পরিমাণে নির্ভরশীল। বিচারপতিদের বেতন ভাতা প্রভৃতি কম হলে তাদের দুর্নীতি পরায়ন হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে। তাই বিচারপতিদের যথেষ্ট পরিমাণে বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়।


মূল্যায়ন 


উপরে উল্লেখিত সাংবিধানিক ব্যবস্থা গুলির মধ্যে ত্রুটি আছে । যেমন - বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করতে বাধ্য কিন্তু এই পরামর্শ রাস্ট্রপতির ওপর বাধ্যতামূলকভাবে প্রযোজ্য নয় । বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব কে প্রতিরোধ করা যায়নি।

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিচারপতিদের নিরপেক্ষতাকে অ্যালান বল "আধা অলীক কাহিনী"(Semi-fiction) বলে বর্ণনা করেছেন।


                               https://politicalsciencenotesonline.blogspot.com


                    

Post a Comment

Previous Post Next Post