ভারতের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা, পদমর্যাদা ও কার্যাবলী সম্পর্কে আলোচনা করো। - Political Science Notes Online

 ভারতের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা, পদমর্যাদা ও কার্যাবলী আলোচনা করো।


ভারতের রাষ্ট্রপতি


ভারতীয় সংবিধানের 52 নম্বর ধারায় ভারতের রাষ্ট্রপতি পদের কথা ঘোষিত হয় । তিনি ভারতের শাসন বিভাগের প্রধান । তাঁর নামে দেশ শাসিত হয়, তিনি হলেন ভারতের প্রথম নাগরিক ।স্থল ,নৌ ও বিমানবাহিনীর তিনি সর্বাধিনায়ক । তিনি দেশে-বিদেশে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন এক কথায় তিনি ভারতীয় শাসন ব্যবস্থায় শীর্ষে  সমাচীন । কিন্তু বাস্তবে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা রাষ্ট্রপতির নামে শাসনকার্য পরিচালনা করে। প্রধানমন্ত্রী হলেন ভারতের প্রকৃত শাসক এবং স্বাভাবিকভাবেই রাষ্ট্রপতি হলেন ভারতের নিয়মতান্ত্রিক বা নামসর্বস্ব প্রধান । তিনি মন্ত্রিসভার পরামর্শ ও অনুমোদনক্রমে সকল ক্ষমতা ব্যবহার করেন।


রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলী:-

সংবিধান অনুসারে , ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী । তাঁর হাতে যে সকল ক্ষমতা ন্যস্ত আছে সেগুলিকে সাত ভাগে ভাগ করে নিম্নে আলোচনা করা হল–––


1. শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতা:-


ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হলেন কেন্দ্র সরকারের প্রধান । কেন্দ্রীয় সরকারের শাসন সংক্রান্ত সকল কাজই রাষ্টপতির নাম সম্পাদিত হয় [77 (1) নং ধারা]। ভারতের রাষ্ট্রপতি হলেন দেশের সর্বোচ্চ শাসন বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ । তিনি নিজে বা তাঁর অধীনস্থ কর্মচারীদের মাধ্যমে শাসন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন [ 53(1) নং ধারা ]।

রাষ্টপতির নিয়োগ সংক্রান্ত ও ব্যাপক ক্ষমতা আছে প্রধানমন্ত্রীসহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সকল সদস্য এবং সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মচারী গণও রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হন।


2. আইন সংক্রান্ত ক্ষমতা:-


ভারতের রাষ্ট্রপতি কেন্দ্রীয় আইনসভা অর্থাৎ পার্লামেন্টের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। রাষ্ট্রপতি এবং দুটি পরিষদ নিয়ে ভারতের পার্লামেন্ট গঠিত হয় (79 ধারা)। রাষ্ট্রপতি পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের অধিবেশন আহ্বান করতে কিংবা অধিবেশন স্থগিত এবং প্রয়োজনবোধে লোকসভা ভেঙে দিতে পারেন।

রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর ছাড়া কোনো বিল আইনে পরিণত হয় না । পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের পাশ হওয়ার পর প্রত্যেকটি বিলকে রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর এর জন্য পাঠাতে হয় । রাষ্ট্রপতি তাতে সম্মতি দিতেও পারেন আবার নাও দিতে পারেন।


3. অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতা:-


সংবিধান অনুসারে, প্রত্যেক আর্থিক বছরের জন্য রাষ্ট্রপতিকে আনুমানিক আয়-ব্যয়ের বাজেট পার্লামেন্টে পেশ করতে হয় । সাধারণত কেন্দ্রের অর্থমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির পক্ষে কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেট পার্লামেন্টে পেশ করেন ‌ । রাষ্ট্রপতির সম্মতি ছাড়া কোনো ব্যায়  মঞ্জুরী পার্লামেন্টে উত্থাপন করা যায় না ।


4. বিচার বিষয়ক ক্ষমতা:-


 রাষ্ট্রপতির কিছু বিচারবিভাগীয় ক্ষমতা আছে।  তিনি সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিদের নিযুক্ত করেন । ফৌজদারি মামলায় দণ্ডিত ব্যক্তির দণ্ডাদেশ স্থগিত রাখতে ,হ্রাস ও ক্ষমা প্রদর্শন করতে পারেন । এছাড়া মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড রদ করে তিনি অন্য দিতে পারেন।


5. জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ক্ষমতা:-


রাষ্ট্রপতির কতগুলি জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ক্ষমতা রয়েছে । এই জরুরি অবস্থাকে দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য  ভারতীয় সংবিধানে  রাষ্ট্রপতিকে  তিন ধরনের জরুরি দেওয়া হয়েছে যেগুলো তিনি  ঘোষণা করতে পারেন । এগুলি হল ––

1.জাতীয় জরুরি অবস্থা (352 ধারা )।

2.রাজ্য শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা (356 ধারা)। 

3.আর্থিক জরুরি অবস্থা (360 ধারা)।


6.সামরিক ক্ষমতা:-


রাষ্ট্রপতি হলেন ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর সর্বাধিনায়ক । তিনি স্থলবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর প্রধানদের নিয়োগ করেন । জাতীয় প্রতিরক্ষা কমিটির প্রধান হিসেবে তাঁকে কার্য সম্পাদন করতে হয় । ওই কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে তিনি যুদ্ধ ঘোষণা কিংবা শান্তি স্থাপন করতে পারেন।


7. অন্যান্য ক্ষমতা:-


উপরোক্ত কার্যাবলী ছাড়াও রাষ্ট্রপতিকে অন্যান্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কার্য সম্পাদন করতে হয় যথা-

১) অর্থ কমিশন সরকারি ভাষা কমিশন প্রভৃতির মত কমিশন নিয়োগ করা।

২) পার্লামেন্টের সংশোধনী ক্ষমতার অধীনে থেকে যেকোনো অঞ্চলকে তপশিলি অঞ্চল কিংবা কোনো তপশিলি অঞ্চলকে অ-তপশিলি অঞ্চল বলে ঘোষণা করা।

৩) যেকোনো তপশিলি অঞ্চলের সীমানা পরিবর্তন করা।

৪) যে রাজ্যে তপশিলি অঞ্চল আছে সেই রাজ্যে একটি উপজাতি পরিষদ গঠনের জন্য নির্দেশ দেওয়া।

৫) জনস্বার্থের দিক থেকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কোনো আইনগত বিষয় সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ গ্রহণ করা।


পদমর্যাদা


 ভারতীয় সংবিধানে রাষ্ট্রপতির প্রকৃত ভূমিকা ও পদমর্যাদা সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা নেই।  ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদের সময় থেকেই রাষ্ট্রপতির প্রকৃত ভূমিকা সম্পর্কে বিতর্ক আছে । অধ্যাপক পাইলি বলেছেন যে –– "পৃথিবীর অন্য কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে এত ক্ষমতা দেওয়া হয়নি যা দেওয়া হয়েছে ভারতের রাষ্ট্রপ্রধানকে"। আমাদের সংবিধান রচিয়াতাদের লক্ষ্য ছিল যে , ভারতের রাষ্ট্রপতি ইংল্যান্ডের রাজা বা রানীর মতো শাসনতান্ত্রিক প্রধান থাকবে ,প্রকৃত শাসনের অধিকারী হবেন প্রধানমন্ত্রী ও তার ক্যাবিনেট।



উপসংহার:-


পরিশেষে বলা যেতে পারে যে, ভারতের রাষ্ট্রপতি ব্রিটেনের রাজা বা  রানীর মতো জাঁকজমকপূর্ণ সাক্ষীগোপাল নন । মন্ত্রিসভাকে পরামর্শ দেওয়ার, উৎসাহিত করার এবং সতর্ক করে দেওয়ার ক্ষমতা তাঁর রয়েছে । তা ছাড়া , সাধারণ নির্বাচনের পর লোকসভায় কোনো দল বা মোর্চা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে ব্যর্থ হলে নিজের ইচ্ছামতো প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ করা ছাড়াও নানা ব্যাপারে তিনি ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারেন।

                            https://politicalsciencenotesonline.blogspot.com

4 Comments

Post a Comment

Previous Post Next Post