রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীতা ও গুরুত্ব আলোচনা করো। একাদশ শ্রেণী 2021

 রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীতা ও গুরুত্ব আলোচনা করো।




ভূমিকা

আধুনিক মানুষের রাজনৈতিক জীবনে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা কি ? এবিষয়ে সকলের মনেই একটা প্রশ্ন থেকেই যায় । রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়ে আমারা কি দেশের নেতা-মন্ত্রী হবো ? রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের সঙ্গে নেতা-মন্ত্রী হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই । রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠ করলে ব্যক্তির রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।


রাষ্ট্র বিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা:-



1. রাজনৈতিক সচেতনা বৃদ্ধি :- 


রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি হয় । জনজীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন-নির্বাচন, নাগরিক অধিকার, রাজনৈতিক অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে চেতনা লাভ করতে হলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।


2.বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ:-


 রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিভিন্ন তত্ত্ব সম্পর্কে অবহিত না থাকলে কোনো ব্যক্তির পক্ষে তার দেশের রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রকৃত স্বরূপ উপলব্ধ করা সম্ভব নয় । ফলে, নিকৃষ্ট কোনো রাষ্ট্রব্যবস্থাকে উৎকৃষ্ট বলে মনে করা ছাড়া আর অন্য কোন উপায় থাকে না। কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে তার বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ সাধিত হয় বলে সে অতি সহজেই বিকল্প রাষ্ট্রব্যবস্থার সন্ধান পেতে পারে এবং তা প্রতিষ্ঠার কাজে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়।



3. রাজনৈতিক সংগঠন সম্পর্কে জ্ঞানলাভ :-


রাজনৈতিক দলের কার্যাবলি, নির্বাচকমন্ডলী, জনমত, সরকার প্রভৃতি সম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়। তাই রাজনৈতিক সংগঠন সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানলাভ করতে হলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠ করা আবশ্যক।


4. সরকারের বিভিন্ন বিভাগ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন:-


 সরকারের বিভিন্ন বিভাগ সম্পর্কে জানতে হলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজন রয়েছে। সাধারণত সরকারের তিনটি প্রধান বিভাগ বা অঙ্গ রয়েছে; যথা- আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে সরকারের এসব বিভাগ সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করা যায়।


5. অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতনতা :-


রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে প্রত্যেক নাগরিক তার অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠে।


6.যোগ্য নেতৃত্ব গঠন:-


রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে যোগ্য নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য, গুণাবলি, শর্ত ইত্যাদি সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞানলাভ করা যায়। তাই যোগ্য নেতৃত্ব গঠনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠ  করা অত্যাবশ্যক।


7.রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা : 


রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে ব্যক্তি তার রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয় । কারণ রাষ্ট্রবিজ্ঞানই রাজনৈতিক অধিকার এবং রাজনৈতিক কর্তব্য সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান প্রদান করে থাকে।


8. আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ধারণা :


 বর্তমান বিশ্বে মানবকল্যাণ সাধনের নিমিত্তে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন গড়ে উঠেছে। জাতিসংঘ, সাধারণসভা , আন্তর্জাতিক বিচারালয়, বিশ্ব স্বস্থ্য সংস্থা,  হিউম্যান রাইটস মুভমেন্ট প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা ও কার্যাবলি সম্পর্কে জানা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সঠিক অনুশীলনের মাধ্যমেই এসব প্রতিষ্ঠান ও এদের কার্যক্রম সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞানলাভ করা যায়।


9. বিশ্ব রাজনীতির গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ:


 বিশ্বে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে নানা দিক দিয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে। তাই একটি দেশের রাজনীতি অপর দেশের রাজনীতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। আন্তর্জাতিক আইন সম্পর্কে ধারণা লাভ, বিশ্বরাজনীতি গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে জ্ঞানলাভ, কূটনীতি, প্রতিরা নীতি, সাম্রাজ্যবাদ প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিতে হলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জ্ঞান থাকা অত্যাবশ্যক।


10. সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ : 


সরকারের গৃহীত নীতি ও কার্যক্রম এবং এর সম্ভাব্য ফলাফল, নির্বাচিত প্রতিনিধির চরিত্র প্রভৃতি সবকিছুই আধুনিক রাষ্ট্রের নাগরিকের জানা প্রয়োজন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে এমন সব তথ্য, অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান লাভ করা যায় যা একজন নাগরিককে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে।


11. তরুণ সমাজকে সচেতন করা :


 আগামী দিনের নাগরিকদের উপরই রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে। রাষ্ট্র তথা গোটা বিশ্বের কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে তরুণ সমাজকে অবশ্যই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জ্ঞান-অর্জন করতে হবে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জ্ঞান-অর্জনের মধ্য দিয়ে তরুণ সমাজ সচেতন হয় এবং এই সচেতন তরুণ সমাজই রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ।


12. সুনাগরিকতার জ্ঞানার্জন : 


রাষ্ট্রের শান্তি-শৃঙ্খলা সুনাগরিকতার উপর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নির্ভরশীল।রাষ্ট্রবিজ্ঞান মানুষকে সুনাগরিকতা অর্জনের শিক্ষা দেয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে নাগরিকগণ বিবেক, বুদ্ধি, আত্মসংযম ইত্যাদিকে শানিত করতে পারে।


13 . সুশাসন প্রতিষ্ঠা : 


একটি রাষ্ট্রের সার্বিক কল্যাণের জন্য সুশাসন প্রতিষ্ঠা অত্যাবশ্যক। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রবিজ্ঞান কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। সুশাসন কি এবং কিভাবে তা প্রতিষ্ঠা করা যায় রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যায়নের মাধ্যমে তা পরিষ্কার হয়ে উঠে।


14. উদার মানসিকতা গঠন : 


বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রই হলো  উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সকল নাগরিকগণ কে  পরস্পর সহানুভুতিশীল মনোভাব নিয়ে চলতে হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সংশ্লিষ্ট সকলকে উদার, সহনশীল, সহমর্মী এবং সংস্কারমুক্ত হতে শিক্ষা দেয়।





উপসংহার:


 পরিশেষে বলা যায় যে, আধুনিককালে নাগরিকতা বিষয়ক জ্ঞান-অর্জন তথা রাজনৈতিক কর্মকান্ড সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে  রাষ্ট্রবিজ্ঞান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশের নাগরিকদের জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই জনগণের কল্যাণ সাধনের জন্য রাষ্ট্রের উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করে গণতন্ত্রের সুফল লাভের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিকেরই রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠ করা উচিত।





                                              — Tapan Mandal

4 Comments

Post a Comment

Previous Post Next Post