ভারতের হাইকোর্টের গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা করো। হাইকোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলী ।

 ভারতের হাইকোর্টের গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা করো।


                    অথবা


হাইকোর্টের গঠন ও কার্যাবলী আলোচনা করো।




ভূমিকা 


রাজ্যের বিচার বিভাগের শীর্ষে হাইকোর্টের অবস্থান । হাইকোর্ট সুপ্রিমকোর্টের চেয়ে বেশি প্রাচীন । সংবিধান অনুসারে ভারতের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে একটি করে হাইকোর্ট থাকবে (214 নং ধারা )। অবশ্য পার্লামেন্ট আইন প্রণয়নের মাধ্যমে দুই বা ততোধিক রাজ্যের  এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের জন্য একটি হাইকোর্ট স্থাপন করতে পারে [ 231(1) নং ধারা ] । বর্তমানে ভারতের অঙ্গরাজ্যের সংখ্যা 28 টি কিন্তু হাইকোর্টের সংখ্যা 25 টি । পশ্চিমবঙ্গ এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের জন্য কলকাতা হাইকোর্ট , জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য শ্রীনগর হাইকোর্ট এবং তামিলনাড়ু ও পন্ডিচেরী জন্য মাদ্রাজ হাইকোর্ট ।


গঠন


সুপ্রিম কোর্টের গঠন সম্পর্কে ভারতীয় সংবিধানের সুস্পষ্ট নির্দেশ আছে । কিন্তু রাজ্যের হাইকোর্ট গুলিতে কতজন বিচারপতি নিয়ে গঠিত হবে, সে বিষয়ে সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি । সংবিধানে কেবল এ কথা বলা হয়েছে যে, একজন প্রধান বিচারপতি এবং অন্য কয়েকজন বিচারপতিকে নিয়ে হাইকোর্ট গঠিত হবে। তাই বিভিন্ন হাইকোর্টের বিচারপতিদের সংখ্যার ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। প্রধান বিচারপতি এবং রাষ্ট্রপতি যতজন বিচারপতি প্রয়োজন মনে করবেন ততজন বিচারপতি হাইকোর্টে থাকবে (216 নং ধারা)।


বিচারপতিদের যোগ্যতা


 হাইকোর্টের বিচারপতি পদে নিযুক্ত হওয়ার জন্য যেসব যোগ্যতার প্রয়োজন সেগুলি হল –– বিচারপতিকে অবশ্যই ভারতীয় নাগরিক হতে হবে এবং তাকে ভারতীয় ভূখণ্ডে অবস্থিত যে কোন বিচার বিভাগীয় পদে কমপক্ষে 10 বছর থাকতে হবে । অথবা অন্তত 10 বছর কোনো হাইকোর্ট কিংবা দুই বা ততোধিক এই ধরনের আদালতে একাদিক্রমে অ্যাডভোকেট হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হতে হবে [ 217(2) নং ধারা ] ।


বিচারপতিদের নিয়োগ 


সংবিধানের 217 নং ধারায় হাইকোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ পদ্ধতি সম্পর্কে উল্লেখ আছে । রাষ্ট্রপতি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতিদের নিযুক্ত করেন । হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি নিয়োগের সময় রাষ্ট্রপতি সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজ্যপাল এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শক্রমে নিয়োগ করেন এবং অন্যান্য বিচারপতিদের নিয়োগের সময় সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং রাজ্যপাল ছাড়াও সংশ্লিষ্ট রাজ্যের হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শক্রমে নিয়োগ করেন [ 217(1) নং ধারা]  ।


বিচারপতিদের কার্যকাল ও পদচ্যুত 


হাইকোর্টের বিচারক 62 বছর বয়স পর্যন্ত নিজের পদে বহাল থাকেন । কার্যকাল শেষ হবার পূর্বে তিনি পদত্যাগ করতে পারেন অথবা তার মৃত্যু হলে বিচারকের আসন শূন্য হয় । অসৎ আচরণ বা অসামর্থ্যের জন্য  রাষ্ট্রপতি বিচারপতিদের পদচ্যুত করতে পারেন।


ক্ষমতা ও কার্যাবলী


ভারতীয় সংবিধানে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলী যেরূপ সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে , হাইকোর্টের ক্ষেত্রে কিন্তু সেরূপ করা হয়নি । সংবিধানে বলা হয়েছে যে , সংবিধান প্রবর্তিত হওয়ার পূর্বে হাইকোর্টসমূহ যেসব ক্ষমতা ভোগ করত , সংবিধান প্রবর্তিত হওয়ার পরেও তারা অনুরূপ ক্ষমতা ভোগ করবে । তবে হাইকোর্ট গুলিকে সকল ক্ষেত্রেই সংবিধান নির্দিষ্ট সীমারেখার মধ্যে থেকেই কাজ করতে হবে । হাইকোর্ট গুলির ক্ষমতা সাধারণত দুটি এলাকায় বিভক্ত যথা – মূল এলাকা ও আপিল এলাকা ।


মূল এলাকা:-

হাইকোর্টের মূল এলাকার বিস্তার খুব উল্লেখযোগ্য নয় । প্রধানত রাজস্ব সংক্রান্ত সকল বিষয়ে মূল এলাকার অন্তর্ভুক্ত  । অনেক ক্ষেত্রে দেওয়ানী মামলাকেও  মূল এলাকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। 


আপিল এলাকা:-

রাজ্য সীমানার মধ্যে হাইকোর্ট হল দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে জেলা জজ ও অধীনস্থ জেলা জজের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা যায়।


উপরোক্ত ক্ষমতা ছাড়াও হাই কোর্টে কতগুলি সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে ––


নির্দেশ ,আদেশ বা লেখ জারির ক্ষমতা


সুপ্রিমকোর্টের মত হাইকোর্টগুলিও নাগরিক অধিকার বলবৎ করার জন্য আদেশ, নির্দেশ বা লেখ জারি করতে পারে( 226 নং ধারা) । হাইকোর্ট তার ভৌগোলিক এলাকার মধ্যে বসবাসকারী নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে গুরুদায়িত্ব পালন করে । এই উদ্দেশ্যে হাইকোর্ট বন্দী প্রত্যক্ষীকরণ, পরমাদেশ , প্রতিষেধ , অধিকারপৃচ্ছা ,উৎপ্রেষণ প্রভৃতি লেখ জারি করতে পারে । সুপ্রিমকোর্ট কেবলমাত্র মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের জন্য লেখ জারি করতে পারে (32 নং ধারা) । হাইকোর্ট গুলি কিন্তু মৌলিক অধিকার এবং অন্যান্য আইনগত অধিকার বলবৎ করার জন্য লেখ জারি করতে পারে।


আইনের বৈধতা বিচারের ক্ষমতা


হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইনের সাংবিধানিক বৈধতা বিচার করতে পারে এবং অসাংবিধানিক  দায়ে যেকোন আইন কে বাতিল করতে পারে । সংবিধানের 42 তম সংশোধনে(1976) হাইকোর্টের হাত থেকে কেন্দ্রীয় আইনের বৈধতা বিচারের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।  কিন্তু 43 তম সংশোধনে (1977 সালে) তা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে ।


মামলা অধিগ্রহণের ক্ষমতা


সংবিধানের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জড়িত আছে এমন কোনো মামলা নিম্ন আদালত থেকে নিজের হাতে নেওয়ার ক্ষমতা হাইকোর্টকে দেওয়া হয়েছে।


নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত ক্ষমতা


 হাইকোর্ট অধস্তন আদালত গুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে । জেলা জজের নিয়োগ, বদলি ,পদোন্নতি প্রভৃতি বিষয়ে এবং অধস্তন আদালত সমূহের অন্যান্য বিচারবিভাগীয় পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্যপাল হাইকোর্টের পরামর্শ গ্রহণ করে থাকেন । জেলা আদালত–সহ অন্যান্য অধস্তন আদালতের কর্মচারীবৃন্দের নিয়োগ-পদোন্নতি প্রভৃতি বিষয়ে হাইকোর্ট বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


অন্যান্য ক্ষমতা


 উপরিক্ত ক্ষমতা গুলি ছাড়াও সুপ্রিমকোর্টের মতো হাইকোর্টও Court of Record হিসেবে কাজ করে । হাইকোর্ট নিজের অবমাননার জন্য অপরাধীদের শাস্তি দানের ব্যবস্থা করতে পারে।


উপসংহার


 অঙ্গরাজ্যে সর্বোচ্চ আদালত হিসেবে হাইকোর্টের ভূমিকা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ । হাইকোর্টের গঠন ও কাজ পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে , এই আদালত প্রকৃত অর্থেই সর্বভারতীয় বিচার ব্যবস্থার একটি অঙ্গ।


2 Comments

  1. অসাধারণ খুব ভালো উত্তর। খুব সহজে পড়া হয়ে যাবে ধন্যবাদ । উচ্চমাধ্যমিকের সাজেশন দিন

    ReplyDelete

Post a Comment

Previous Post Next Post