ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতির নির্বাচন, কার্যকাল,যোগ্যতা,ক্ষমতা ও কার্যাবলী

ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি 

সংবিধান অনুসারে ভারতে একজন উপরাষ্ট্রপতি থাকবেন (৬৩ ধারা )। পদমর্যাদার দিক থেকে রাষ্ট্রপতির ঠিক পরেই উপরাষ্ট্রপতি স্থান। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় একজন উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন করা হয় । উপরাষ্ট্রপতিকে নির্বাচন করে একটি নির্বাচকমণ্ডলী । এই নির্বাচকমন্ডলী গঠিত হয় পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের সদস্যদের নিয়ে।


যােগ্যতা : উপ - রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর যােগ্যতাবলী সম্পর্কে সংবিধানের ৬৬ ধারায় উল্লেখ আছে । কোনো ব্যক্তিকে উপরাষ্ট্রপতি হতে গেলে যেসব যোগ্যতার প্রয়োজন সেগুলো হলো  – ( ১ ) ভারতীয় নাগরিক হতে হবে , ( ২ ) বয়স হতে হবে অন্তত ৩৫ বছর , ( ৩ ) রাজ্যসভার সদস্য হওয়ার মত যােগ্যতা থাকবে এবং     ( ৪ ) প্রার্থী হবার সময় বেতনভােগী কোনো সরকারি পদে আসীন থাকা চলবে না [ ৬৬ ( ৩ ) ধারা ] । পার্লামেন্টের মনােনীত সদস্য সমেত কেন্দ্রীয় ও রাজ্য আইনসভার সদস্যগণ উপ - রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন । কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁকে আইনসভার সদস্যপদ ত্যাগ করতে হয় । উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর মনােনয়নপত্র কুড়িজন নির্বাচকের দ্বারা প্রস্তাবিত এবং অন্য কুড়িজন নির্বাচকের দ্বারা সমর্থিত হওয়া দরকার । এবং উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীকে ১৫,০০০ টাকা জামানত হিসাবে জমা দিতে হয় ।




 উপ-রাষ্ট্রপতির নির্বাচন, কার্যকাল ও পদচ্যুতি : পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের সদস্যদের নিয়ে গঠিত একটি নির্বাচক সংস্থা কর্তৃক একক হস্তান্তরযােগ্য ভােটের ভিত্তিতে সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের নিয়মানুযায়ী গােপন ভােটে উপ-রাষ্ট্রপতি  নির্বাচিত হন । তার কার্যকালের মেয়াদ ৫ বছর । অবশ্য তিনি পুনর্নির্বাচিত হতে পারেন । আবার , কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বেই উপরাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতির কাছে স্বেচ্ছায় তার পদত্যাগপত্র পেশ করতে পারেন ।আবার, সংবিধানভঙ্গের অভিযােগে ১৪ দিনের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রাজ্যসভার তদানীন্তন মােট সদস্যের সংখ্যাধিক্য ভােটে গৃহীত প্রস্তাবে লােকসভা সম্মতি জ্ঞাপন করলেই কার্যকাল পরিসমাপ্তির পূর্বে তাকে পদচ্যুত করা যায় ।



 উপ-রাষ্ট্রপতির বেতন ও ভাতা : বস্তুত উপ - রাষ্ট্রপতি হিসাবে তিনি কোন বেতন পান না । রাজ্যসভার সভাপতি হিসাবেই তিনি বেতন পান । সংবিধান সংশােধনের মাধ্যমে বেশ কয়েকবার উপ - রাষ্ট্রপতির বেতন বৃদ্ধি পায় ।   বর্তমানে উপ - রাষ্ট্রপতির মাসিক বেতন বৃদ্ধি পেয়ে হয় চার লক্ষ ( ৪,০০,০০০ ) টাকা । তবে তিনি যখন রাষ্ট্রপতির ভূমিকা পালন করেন , তখন তিনি রাষ্ট্রপতির বেতন ও ভাতা পেয়ে থাকেন । এর বাইরে তিনি ভাতা ও অন্যান্য সুযােগ - সুবিধা ভােগ করেন । 



 উপ-রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও পদমর্যাদা 


 [ ১ ] সংবিধানের ৬৪ নং ধারা অনুযায়ী রাজ্যসভায় সভাপতিত্ব করাই হল উপরাষ্ট্রপতির প্রধান কাজ । [ ২ ] তা ছাড়া , রাষ্ট্রপতির মৃত্যু , পদত্যাগ বা পদচ্যুতি ঘটলে উপরাষ্ট্রপতি অস্থায়ীভাবে তাঁর পদে অভিষিক্ত হন এবং নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি রাষ্ট্রপতির যাবতীয় কার্য সম্পাদন করেন । [ ৩ ] আবার , অসুস্থতা , অনুপস্থিতি কিংবা অন্য কোনাে কারণবশত রাষ্ট্রপতি কার্য সম্পাদনে অক্ষম হলে উপরাষ্ট্রপতি তার যাবতীয় কার্য সম্পাদন করে থাকেন । উপরাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতির মতাে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী না হলেও সম্মান ও মর্যাদার দিক থেকে তাঁর পদের গুরুত্ব কম নয় । তত্ত্বগতভাবে তিনি ভারতের দ্বিতীয় পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি । কিন্তু বাস্তবের কষ্টিপাথরে বিচার করলে দেখা যায় যে , ক্ষমতা ও পদমর্যাদার দিক থেকে তার ভূমিকা আদৌ গুরুত্বপূর্ণ নয় ।




Post a Comment

Previous Post Next Post